বাড়িতে রাখা পেট্রোলের জ্যারিকেন দেখাচ্ছেন জয়দেববাবু।
রান্নার গ্যাসের ওভেন জ্বালাতে ভয় পান শঙ্করী সামন্ত। বিদ্যুৎ চমকালেও ভয় পান। ঘরে খিল এঁটে বসে থাকেন বাড়ির সকলে। রাতে প্রায়ই ঘুম ভেঙে যায়!
একদিন-দু’দিন বা এক-দু’মাস নয়, টানা চার বছর ধরে ঘরে মজুত ৪০০ লিটার পেট্রল-ডিজেলের জন্য আতঙ্কে দিন কাটছে উলুবেড়িয়ার ফতেপুর বটতলার সামন্ত পরিবারের। আগুন লেগে যাওয়ার আতঙ্ক। অথচ, এই জ্বালানি তাঁদের নয়। পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা। বলা সত্ত্বেও পুলিশ তা নিয়ে যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ওই পরিবারের। আবার অন্যত্র তাঁরা সরিয়েও দিতে পারছেন না। কারণ, পুলিশের খাতায় তাঁরাই ওই জ্বালানির ‘জিম্মাদার’।
২০১৫ সালের জুন মাসে ফতেপুর এলাকা থেকে সাতটি জ্যারিকেন ভর্তি ওই জ্বালানি বাজেয়াপ্ত করে জেলা পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা। তা রাখা হয় শঙ্করীদেবীর বাড়িতে। তাঁর স্বামী জয়দেববাবু তখন কেরোসিনের ডিলার ছিলেন। বর্তমানে সেই ‘ডিলারশিপ’ ছেড়ে বাড়ির পাশেই মুদি দোকান চালান বাহাত্তরের বৃদ্ধ। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘জ্যারিকেন ভর্তি ওই পেট্রল-ডিজেলের দিকে চোখ পড়লেই শরীর শরীর খারাপ লাগে। কখন কী বিপদ ঘটে, এই ভয়ে ভয়েই চার বছর কাটতে চলল। বলা সত্ত্বেও পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে না।’’
কী বলছে পুলিশ? হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিক বিশ্বরূপ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে, জয়দেববাবু সেই সময় কেরোসিন ডিলার ছিলেন বলেই পুলিশ ওই জ্বালানির জিম্মাদার করেছিল তাঁকে। উনি যে আর ডিলার নন, সেটা পুলিশকে জানানো দরকার ছিল।’’
মজুত করার সময়ে পুলিশ জয়দেববাবুকে ‘জিম্মাদার’ হিসেবে যে মুচলেকা লিখিয়ে নেয়, তাতে শর্ত রয়েছে— ‘আদালত বা পুলিশের নির্দেশ অথবা তলবমতো যে স্থানে বলা হবে সেখানে ওই জ্বালানি পাঠিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে’। এই মুচলেকাই আরও চিন্তায় ফেলেছে ওই পরিবারকে।
জ্যারিকেনগুলি রয়েছে জয়দেববাবুর রান্নাঘর এবং শৌচাগারে। পাঁচটিতে ৬০ লিটার করে ডিজেল এবং দু’টি জ্যারিকেনে ১০০ লিটার পেট্রল রয়েছে। রান্নাঘরে জ্বালানি থাকায় আর সেখানে রান্না করতে সাহস করেন না জয়দেববাবুর স্ত্রী। রান্নাঘর বন্ধ করে তিনি দু’কামরার ছোট্ট বাড়ির দালানের এক কোণে রান্নাঘর বানিয়েছেন। কিন্তু সেই রান্নাঘরের ফুটপাঁচেক দূরেই যে মজুত ওই সব জ্যারিকেন! ফলে, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় রান্না করতে গিয়ে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন শঙ্করীদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘যখন গ্যাস ওভেন জ্বালাতে যাই, ভয় লাগে। পুলিশ ওই জ্যারিকেনগুলি নিয়ে যাক। আর কতদিন আতঙ্কে থাকব?’’ ছেলে অনুপ বলেন, ‘‘আতঙ্কে বাবার শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ওই তেল নিয়ে যাক। কখনও আগুন লাগলে কী হতে পারে, ভাবলেই শিউরে উঠি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy