ভুয়ো ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের বাড়ি— (১) প্রধানের শাশুড়ি (২) প্রধানের ভগ্নিপতি (৩) পিসতুতো শ্যালক (৪) দুই খুড় শ্বশুর। —নিজস্ব চিত্র
তালিকায় কার নাম নেই! স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-ভ্রাতৃবধূ, ভাইপো, ভাগ্নে, শ্যালক-সহ তাঁর পরিবারের অন্তত ২৬ জন। রয়েছে তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠের নামও। ব্লক প্রশাসনের তদন্ত বলছে, সকলেই আমপানের ভুয়ো ক্ষতিপূরণ-প্রাপক। তাই প্রশাসনের নোটিসে টাকা ফেরানো শুরু করেছেন আরামবাগের তৃণমূল পরিচালিত হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুল আজিজ খান ওরফে লাল্টুর পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠেরা।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রধানের পরিবার থেকে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ফেরত পাওয়া গিয়েছে। আরও লক্ষাধিক টাকা ফেরার কথা। প্রধানের ঘনিষ্ঠ ভুয়ো ক্ষতিপূরণ-প্রাপকদের থেকে ফিরেছে আরও ৪০ হাজার টাকা।
ব্লক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক সুমন্ত যশ শনিবার বলেন, “এখনও পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য নন, এমন ১৫ জনের থেকে ২০ হাজার টাকা করে ফেরত পাওয়া গিয়েছে। আরও ১৫ জনকে টাকা ফেরতের জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে। ভুয়ো ক্ষতিপূরণ-প্রাপকদের চিহ্নিত করে দফায় দফায় নোটিস পাঠানো হচ্ছে।”
নিজের আত্মীয়-পরিজনদের নাম ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় থাকার কথা স্বীকার করে তার দায় পঞ্চায়েত কর্মীদের ঘাড়ে চাপিয়েছেন প্রধান। তাঁর দাবি, ‘‘সে সময় করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় আমরা গৃহ-নিভৃতবাসে ছিলাম। পঞ্চায়েত কর্মীরা তড়িঘড়ি তালিকা পাঠাতে গিয়ে এ সব ভুল করে ফেলেন। শোরগোল হতেই স্ত্রী, শাশুড়ি, ভাইয়ের বউ-সহ পরিবারের ১৫-১৬ জনের টাকা ফেরত দিয়েছি। ব্লক প্রশাসন আরও নোটিস পাঠিয়েছে। বাকি টাকাও ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”
প্রধানের এই সাফাইয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে এক পঞ্চায়েত কর্মীর পাল্টা দাবি, “প্রধান পুরোপুরি সুস্থ অবস্থায় ঠান্ডা মাথাতেই ওই সব নাম পাঠিয়েছিলেন।”
বাড়ির কোনও ক্ষয়ক্ষতি না-হওয়া সত্ত্বেও আমপানের পরে প্রধানের পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের নাম পঞ্চায়েতের করা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় ওঠায় প্রথম থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলছিলেন গ্রামবাসী। দলের অন্দরেও শোরগোল হয়। কিন্তু তার মধ্যেই ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি হয়ে যায়। প্রতিবাদে গত ২৯ জুন বিডিও বিশাখ ভট্টচার্যকে ঘেরাও করেছিলেন গ্রামবাসী।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ মে আমপানের পরে ওই পঞ্চায়েত থেকে মোট ১৮৭ জন ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা পাঠানো হয়। এর পরে রাজ্য জুড়ে ওই তালিকায় দুর্নীতি এবং বঞ্চনার অভিযোগ ওঠায় রাজ্য সরকারের নির্দেশমতো জেলা প্রশাসন তদন্তের নির্দেশ দেয় ব্লক প্রশাসনকে। নতুন করে ব্লকে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন নেওয়াও শুরু হয়।
তদন্ত করতে গিয়েই ব্লকের এক্সটেনশন অফিসারা হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের তালিকায় ভুয়ো নামের অস্তিত্ব পান। তাঁরা দেখেন, যাঁদের বাড়ির বিন্দুমাত্র ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তাঁদের নামও তালিকায় রয়েছে। প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিব্রত তাঁর দল। আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের গুণধর খাঁড়া মনে করছেন, এ রকম ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে।
তবে, জেলায় এ ভাবে মোট কত টাকা ফেরানো হল, সে তথ্য মেলেনি। আমপান সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি) নিখিলেশ মণ্ডল জানান, বিডিওরা তদন্ত করে যাঁরা টাকা পাওয়ার উপযুক্ত নন, তাঁদের নোটিস পাঠাচ্ছেন। সেই টাকা ফেরত নিচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত কত টাকা ফেরত পাওয়া গিয়েছে সেই হিসাব এখনও জেলা প্রশাসনের কাছে আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy