Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Balagarh

বলাগড়ে বালিকা খুনে দোষী সাব্যস্ত দুই যুবক

নিহত অন্বেষা মণ্ডলের ছবি নিয়ে বুধবার আদালতে এসেছিলেন তার বাবা চিন্ময়। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটা আর ফিরবে না। কিন্তু নিষ্পাপ মেয়েটার উপরে যারা অত্যাচার চালিয়েছিল, তাদের চরম শাস্তি চাই।’’

দোষী গৌরব ও কৌশিক। চুঁচুড়া আদালত চত্বরে।  ছবি: তাপস ঘোষ

দোষী গৌরব ও কৌশিক। চুঁচুড়া আদালত চত্বরে। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪২
Share: Save:

মুক্তিপণ আদায়ের জন্য বলাগড়ের এগারো বছরের এক বালিকাকে অপহরণ করেছিল তিন জন। মেয়েটি চিৎকার করায় গলা টিপে তাকে খুন করে বস্তায় ভরে দেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছিল গঙ্গার চরে। পাঁচ বছর আগের এই ঘটনায় অভিযুক্ত দু’জনকে বুধবার দোষী সাব্যস্ত করল চুঁচুড়া আদালত। ঘটনার সময় অপর এক অভিযুক্তের বয়স ছিল আঠেরো বছরের নীচে। জুভেনাইল আদালতে তার বিচার চলছে।

এ দিন যে দু’জনরে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তারা হল গৌরব মণ্ডল ওরফে শানু এবং কৌশিক মালিক। মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী সুব্রত গুছাইত জানান, আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তথা বিশেষ পকসো কোর্টের বিচারক মানসরঞ্জন সান্যাল আগামী সোমবার দোষী ওই দুই যুবকের সাজা ঘোষণা করবেন।

নিহত অন্বেষা মণ্ডলের ছবি নিয়ে বুধবার আদালতে এসেছিলেন তার বাবা চিন্ময়। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটা আর ফিরবে না। কিন্তু নিষ্পাপ মেয়েটার উপরে যারা অত্যাচার চালিয়েছিল, তাদের চরম শাস্তি চাই।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্বেষার বাড়ি বলাগড় ব্লকের সিজা-কামালপুর পঞ্চায়েতের উত্তর গোপালপুরে। ঘটনার সময় সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মেয়েটি জিরাটের আশুতোষ শিক্ষামন্দিরের কাছে টিউশন পড়তে যায়। পড়া শেষ হলে রাত ৮টা নাগাদ সাইকেলে বাড়ি ফিরছিল। সেই সময় স্থানীয় হাটতলার বাসিন্দা শানু, কৌশিক এবং দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র মেয়েটিকে অপহরণ করে। জোর করে তাকে গঙ্গার ধারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ভয়ে মেয়েটি চিৎকার করলে গঙ্গার ধারের একটি ঝোপের সামনে তারা শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। এর পরে দেহ গঙ্গার ধারে ফেলে রেখে তারা জিরাটের একটি হোটেলে খাওয়া-দাওয়া সারে। গভীর রাতে একটি কোদাল এবং বস্তা নিয়ে তারা গঙ্গার ধারে ফিরে আসে। অন্বেষার দেহটি চটের একটি বস্তায় ভরে। পুরো দেহ বস্তায় না-ঢোকায় কোদালের বাঁট দিয়ে মেরে মেয়েটির পা ভেঙে দেয়। তার পরে দেহ বস্তায় ভরে গঙ্গার চরে নিয়ে গিয়ে পুঁতে দেয়।

এ দিকে অন্বেষা না-ফেরায় বাড়ির লোকজন এবং পড়শিরা খোঁজ শুরু করেন। অন্বেষাকে তাঁরা মোবাইলে পাননি। পরে সেই ফোন ধরে শানুরা মেয়েটির পরিজনদের কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তারা জানায়, টাকা কোথায় দিতে হবে, পরে তারা জানিয়ে দেবে। এই বলে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। পরের দিন চিন্ময়বাবু বলাগড় থানায় অপহরণের অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্তে নামে। ওই রাতেই শানু, কৌশিক এবং দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে গঙ্গার চরের মাটি খুঁড়ে অন্বেষার দেহ মেলে। গঙ্গার পাড় থেকে মেলে তার সাইকেল। কাছেই ঝোপের সামনে তার চটিজোড়া পাওয়া যায়। অপহরণের সঙ্গে খুন-সহ অন্যান্য ধারা জুড়ে তদন্ত আরম্ভ হয়।

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা অপরাধ স্বীকার করে। ঘটনার নব্বই দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী অফিসার সোমনাথ দে। ধরা পড়ার পর থেকে শানু এবং কৌশিক জামিন পায়নি। সরকারি কৌঁসুলি সুব্রতবাবু জানান, ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয় যে, মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। পিটিয়ে তার দু’টি পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। আদালতে মোট ৩৩ জন সাক্ষ্য দেন। বুধবার বিচারক মানসরঞ্জন সান্যাল অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ, খুন, প্রমাণ লোপের চেষ্টা, একাধিক ব্যক্তি মিলে একই উদ্দেশ্যে অপরাধ সংগঠিত করা এবং পকসো আইনে নাবালকের উপরে শারীরিক নিগ্রহের ধারায় শানু ও কৌশিককে দোষী সাব্যস্ত করেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Balagarh Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy