হুগলির ভাস্তারার হোম-কাণ্ড সামনে আসার পরে এক সপ্তাহও কাটেনি। এ বার চন্দননগরের একটি হোমের এক আবাসিক কিশোরীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে হোম-সম্পাদককে গ্রেফতার করল পুলিশ।
দিন কয়েক আগেই গুড়াপের ভাস্তারার হোমের বেশ কিছু আবাসিককে চন্দননগরের ওই হোমে সরিয়ে এনে রাখার ব্যবস্থা করে প্রশাসন। এ বার চন্দননগরের সেই হোমেরই সম্পাদকের গ্রেফতারিতে বেসরকারি হোমের আবাসিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠে গেল, তেমনই প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের গড়া ‘নজরদারি কমিটি’র ভূমিকা নিয়েও।
পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে চন্দননগরের বোড়াই চণ্ডীতলা এলাকার ‘প্রবর্তক সেবা নিকেতন’ নামে বেসরকারি হোমটির বছর চোদ্দোর ওই আবাসিক কিশোরী হোম-সম্পাদক পরিমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পরিমলকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে সোমবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই হোম-সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলার হোমগুলির প্রতি ইতিমধ্যেই বাড়তি নজরদারি শুরু হয়েছে। কোনও অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের দাবি, হোমটিতে প্রশাসনের নজরদারি চলে। এমন কোনও ঘটনা এই প্রথম। দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে আমাদের একটি দল ওই হোমে যাবে। সব কিছু খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও জেলার হোমগুলিতে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু অনেকেই তুলছেন। বছর দুয়েক আগে হুগলির গুড়াপের ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ হোমের আবাসিক গুড়িয়া হত্যার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। গত সপ্তাহে সেই গুড়াপেরই ‘ভাস্তারা খ্রিস্টান সেন্টার’ নামে অন্য একটি হোমের এক নাবালিকাকে টানা ধর্ষণের অভিযোগে সেখানকার অন্যতম কর্ণধারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু তার পরেও নজরদারির ব্যবস্থা যে সেই তিমিরেই, তা আবার বোঝা গেল চন্দননগরের ঘটনাটি সামনে আসায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হোমটি ৭২ বছরের পুরনো। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি বিজড়িত। সেখানে ৩০ জন প্রতিবন্ধী-সহ ১৮০ জন আবাসিক রয়েছেন। ওই কিশোরী আদতে মানকুণ্ডুর বাসিন্দা। সেখানে তার ঠাকুমা থাকে। বাবা-মা ছেড়ে চলে যাওয়ায় বছর পাঁচেক আগে ওই কিশোরী ও তার বোনকে চন্দননগরের ওই হোমে রেখে আসেন পরিবারের অন্যেরা। ওই কিশোরী হোম পরিচালিত স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সম্প্রতি ঠাকুমা ছোট নাতনিকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখেন। বড় নাতনিকে দেখতে তিনি তো হোমে আসতেনই, আসতেন তাঁর মহিলা-ভাড়াটিয়াও।
গত শুক্রবার ওই মহিলা-ভাড়াটিয়া কিশোরীর সঙ্গে দেখা করতে যান। অভিযোগ, পরিমল তাঁর সঙ্গে দুর্বব্যহার করে তাঁকে হোমের বাইরে চলে যেতে নির্দেশ দেন। তিনি পরে হোমের বাইরে ওই কিশোরীর সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেই তাঁর কাছে কিশোরী পরিমলের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির কথা তোলে বলে ওই ভাড়াটিয়া জানান। রবিবার রাতেই কিশোরীকে নিয়ে থানায় যান ওই মহিলা।
ওই মহিলা বলেন, “ওই সম্পাদকের শাস্তি হওয়া দরকার। মেয়েটি আমার কাছে সব কথাই বলেছে।” তবে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ধৃত পরিমল। তাঁর দাবি, “স্থানীয় কিছু বাসিন্দার সহযোগিতা নিয়ে চক্রান্ত করে আমায় ফাঁসানো হল। আমার নামে কলঙ্ক ছড়িয়ে হোমটিকেও কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy