রাস্তার উপরে ফেলে রাখা হয়েছে ইট, স্টোনচিপসের স্তূপ, যে জন্য ঘটে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার পরে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ। ইনসেটে মৃত কালীপদ বিশ্বাস। ছবি: তাপস ঘোষ।
রাস্তা প্রায় ২৫ ফুট চওড়া। রয়েছে ফুটপাথও। কিন্তু তার দখল নিয়েছে ইমারতি সামগ্রী। এমনকী, ইট-বালি ফুটপাথ ছাড়িয়ে দখল করেছে রাস্তারও একাংশ। আর তার জেরে এ বার চুঁচুড়ায় পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল কালীপদ বিশ্বাস (৮০) নামে এক বৃদ্ধের। প্রতিবাদে প্রায় তিন ঘণ্টা পথ অবরোধ করেন স্থানীয় মানুষ।
ইমারতি সরঞ্জাম ফেলে রাস্তা দখল শুধু চুঁচুড়ায় নয়। রাজ্যের নানা প্রান্তেই এমন নজির রয়েছে। তার জন্য দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও স্থানীয় প্রশাসনগুলির টনক নড়ছে না। মাস খানেক আগেই হাওড়ার বীরশিবপুরে রাস্তার ইমারতি সরঞ্জাম ফেলে রাখায় এক মোটরবাইক আরোহী পাশ কাটাতে গেলে বুকে বাঁশ ঢুকে যাওয়ায় মারা যান। সপ্তাহ কয়েক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে দিঘা-কলকাতা সড়কেও একই কারণে দুর্ঘটনায় এক জন মারা যান। সেই তালিকায় এ বার সংযোজন হল চুঁচুড়ার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলির মোড় থেকে চুঁচুড়া বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার পথে পিপুলপাতির কাছে কয়েকটি আবাসন তৈরি হচ্ছে। সেই কারণে বেশ কিছু দিন ধরেই ফুটপাথ জুড়ে মজুত করা হচ্ছে পাথর, বালি এবং ইট। সেই সব সামগ্রী ফুটপাথ ছাড়িয়ে রাস্তার একাংশেরও দখল নিচ্ছে। এর ফলে, ওই রাস্তায় যানবাহনও স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারছে না। প্রায়ই যানজটও হচ্ছে।
রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ পিপুলপাতির বাসিন্দা, হিন্দুস্তান মোটরস কারখানার অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কালীপদবাবু হেঁটেই রেশন তুলতে যাচ্ছিলেন। ফুটপাথ জুড়ে বালি-ইট থাকায় তিনি রাস্তায় নামেন। রাস্তাতেও ছড়িয়ে থাকা ইট-বালিকে পাশ কাটালে গেলে পিছন দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসে চুঁচুড়া-দশঘরা ১৭ নম্বর রুটের একটি বাস তাঁকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়।
এর পরেই ঘটনার প্রতিবাদ এবং মৃতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে বেলা ১১টা থেকে অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, রাস্তায় ইমরতি সামগ্রী রাখার ফলে এর আগে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বার প্রাণহানি হল। যে সব ব্যবসায়ী ওই সব সামগ্রী রাস্তায় ফেলে রাখছেন, বারণ করা সত্ত্বেও তাঁরা শুনছেন না। পুলিশ-প্রশাসনও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বেলা ২টো নাগাদ পুলিশ ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। কালীপদবাবুর বড় বৌমা সর্বাণী বিশ্বাস বলেন, “বয়স হওয়া সত্ত্বেও শ্বশুরমশাই শক্তসমর্থ ছিলেন। হেঁটে যাতায়াত করতে পারতেন। এ দিন যে ভাবে দুর্ঘটনায় মারা গেলেন, তা ভাবতে পারছি না।’’
কেন রাস্তায় ইট-বালি ফেলে রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ বা পুরসভা?
হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন, “সাধারণ মানুষের তরফে এ নিয়ে কোনও অভিযোগ পেলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এখনও এ নিয়ে কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।”
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তায় ইট-বালি ফেলে রাখা নিয়ে আগে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলাম। তা লিখিত ভাবে জানাতে বলেছিলাম। দু’টি আবাসন প্রকল্পের জন্য রাস্তায় ইট-বালি ফেলে রাখা হয়েছে। সে কারণেই এ দিন দুর্ঘটনা হল। ওই আবাসন নির্মাতাদের শোকজ করা হবে। শোকজের উত্তর যথাযথ না হলে জরিমানাও করা হবে।”
এ দিন সকালে হুগলির দাদপুরের মহেশ্বরপুরে, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে অন্য একটি দুর্ঘটনায় মারা যান শকুন্তলা সিংহানিয়া (৬৩) নামে দক্ষিণ আসানসোলের এক বাসিন্দা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামী ওমপ্রকাশ সিংহানিয়া এবং পরিচারককে নিয়ে তিনি গাড়িতে কলকাতায় ছেলের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। মহেশ্বরপুরে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনের একটি চলন্ত ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে। চালক-সহ গাড়ির চার আরোহী গুরুতর আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের চিকিৎসার জন্য চুঁচুড়া হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। রাস্তাতেই শকুন্তলা মারা যান। বাকিরা হাসপাতালে চিকিসাধীন রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy