জলমগ্ন সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানার কর্মী আবাসন। ছবি: তাপস ঘোষ
ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে নিকাশি নালা। বেরনোর পথ না পেয়ে বৃষ্টির জল ভাসছে হুগলির সাহাগঞ্জে বন্ধ ডানলপ কারখানার শ্রমিক মহল্লা। কারও ঘরে গোড়ালিজল। রাস্তায় জল কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর ছাপিয়ে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরনো বন্ধ। জল বের করা নিয়ে প্রশাসন উদাসীন বলে অভিযোগ। এ দিকে, জেলায় ডেঙ্গি সংক্রমণ বাড়ছে। জমা জলে মশার বংশবৃদ্ধি এবং মশাবাহিত রোগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখানে হাজার তিনেক শ্রমিক-পরিবার রয়েছে।
ডানলপ কারখানার উৎকর্ষতার পাশাপাশি এখানকার শ্রমিক মহল্লার পরিকাঠামো দেখার মতো ছিল। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, চোখের সামনেই তাঁরা কারখানা বিলীন হতে দেখেছেন। অনেকেরই পাওনাগন্ডা বকেয়া। সেই টাকার আশায় কারখানা চত্বরের আবাসনে বসবাস করছেন অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন চাইছে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। তাই নিকাশির মতো ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা নিয়েও হেলদোল নেই। অভিযোগ উড়িয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, মঙ্গলবার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দুই প্রতিনিধিকে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্রুত জল বের করার ব্যবস্থা করা হবে।
প্রশাসনের কর্তা যা-ই বলুন, শ্রমিক পরিবারের লোকজনের দাবি, মাসখানেক ধরে শ্রমিক মহল্লায় জল জমে রয়েছে। জল ভেঙে স্কুল-কলেজে যেতে হয়েছে পড়ুয়াদের। সোমবার টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে গোটা এলাকা কার্যত জলবন্দি। জনজীবন বিপর্যস্ত।
কেন এই অবস্থা?
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, লিকুইডেশনে যাওয়ার আগে থেকেই কারখানায় লুটপাট হয়েছিল, যা এখনও চলছে। এক সময়ে ডানলপের প্রেক্ষাগৃহ-সংলগ্ন এলাকায় থাকা সমস্ত কংক্রিটের নির্মাণ ভেঙে লুটপাট চলার সময়ে নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে যায়। তার জেরেই এই জলযন্ত্রণা। শ্রমিক আবাসনের বাসিন্দা মিনতি পাল বলেন, "স্বামী এক বছর আগে মারা গিয়েছেন। একা থাকি। ঘরবন্দি হয়ে থাকলে খাব কি!" স্কুলছাত্রী অঙ্কিতা সাউ বলে, "রাস্তায় এক কোমর জল। ঘরে গোড়ালি ডুবছে জলে। স্কুলে যেতে পারিনি। এ ভাবে কত দিন থাকা যায়!"
ডানলপ কারখানা চত্বর ব্যান্ডেল ও সপ্তগ্রাম পঞ্চায়েত এবং বাঁশবেড়িয়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। বাঁশবেড়িয়ার পুরপ্রধান আদিত্য নিয়োগী বলেন, ‘‘লিকুইডেটর কারখানার সমস্ত কিছু ভেঙে দিয়েছে। দেখলে মনে হবে, যুদ্ধের পরে কোনও ধ্বংসস্তূপ। সেই স্তূপেই বহুতলের নীচে থাকা নিকাশি নালা চাপা পড়েছে। আমরা নিকাশির পথ খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ গত মে মাসে ঝড়ে মূল কারখানার এক দিকের উঁচু পাঁচিলের একাংশ ভেঙে যায়। তারপরেই কারখানার ধ্বংসাবশেষ সকলের নজরে আসে। স্থানীয়দের অভিযোগ, লিকুইডেটর ভেঙে দেওয়ায় এই পরিস্থিতি ভাবলে বিষয়টিকে লঘু করা হয়। ঘটনা হচ্ছে, চোরাকারবারি তথা দুষ্কৃতীরা যথেচ্ছ লুটপাট চালিয়েছে সেখানে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন সংস্থা, ঋণদাতা ও শ্রমিকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ২০১২ সালে ডানলপকে লিকুইডেশনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। নানা আইনি প্রক্রিয়ার পরে ২০১৭ সালে লিকুইডেটরের নোটিস ঝোলে কারখানার গেটে। গত বছরের গোড়ায় হাই কোর্ট নিযুক্ত লিকুইডেটরের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছিল, ডানলপের যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হবে। সেই মতো কারখানার যন্ত্রপাতি, আচ্ছাদন (শেড) ইত্যাদি প্রথম দফায় নিলামে ওঠে।
সূত্রের খবর, মাস পাঁচেক আগে নিলামে মহারাষ্ট্রের একটি সংস্থা সেই সব জিনিসপত্র খুলে নিয়ে চলে যায়। অভিযোগ, তারপর থেকে পড়ে থাকা মালপত্র চুরি যেত থাকে। সেই তালিকায় বিভিন্ন ভবনের ইট-কাঠও বাদ যায়নি।
বন্ধ কারখানায় কাজ হারিয়েছে অনেকে। এখন নিকাশি ব্যবস্থার হাল না ফিরলে মাথা গোঁজার উপায়ও থাকবে না বলে আতঙ্কিত শ্রমিক মহল্লা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy