Advertisement
E-Paper

কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা, ধুঁকছে হাওড়ার ‘কুমোরটুলি’

প্রসস্থের চিত্রকরপাড়ায় ছোট-বড় মিলিয়ে ঠাকুর তৈরির গোলা খান তিরিশেক। কয়েকশো প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। যদিও শিল্পীদের বক্তব্য, আগের মতো রমরমা আর নেই।

An image of Kumortuli

হাওড়ার ‘কুমোরটুলি’ প্রসস্থের চিত্রকর পাড়া। —নিজস্ব চিত্র।

অরিন্দম বসু

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১৬
Share
Save

পুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। মুম্বই রোডের অঙ্কুরহাটি চেক পোস্ট থেকে আন্দুলের দিকে কিছুটা এগোলেই প্রশস্থের চিত্রকরপাড়ায় রাস্তার দু’ধারে দুর্গার সংসার! আশ্বিনের বৃষ্টিভেজা দুপুরে কেউ মহিষাসুরের গায়ের কাঁচা রং আগুনের হলকা দিয়ে শুকনোর চেষ্টা করছেন। কেউ সিংহের দাঁত ঠিক করতে ব্যস্ত। কেউ সরস্বতীর বীণায় আঁকিবুকি কাটছেন। দিনরাত চলছে কাজ। তবু মন ভাল নেই হাওড়ার ‘কুমোরটুলি’ বলে পরিচিত এ তল্লাটের।

কেন?

প্রসস্থের চিত্রকরপাড়ায় ছোট-বড় মিলিয়ে ঠাকুর তৈরির গোলা খান তিরিশেক। কয়েকশো প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। যদিও শিল্পীদের বক্তব্য, আগের মতো রমরমা আর নেই। বাইরে থেকে ভাল বাজার মনে হলেও, ভিতরে হাঁড়ির হাল। তাঁদের দাবি, কাঁচামালের আকাশছোঁয়া দামের ঠেলায় জেরবার প্রতিমা শিল্পীরা। শ্রমিকের খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়েছে অনেকটাই। কিন্তু প্রতিমা বিক্রির ক্ষেত্রে দাম সেই তুলনায় বাড়ানো যায়নি বললেই চলে। ফলে লাভের মুখ দেখতে ঘাম ছুটছে।

মৃৎশিল্পী প্রভাস চিত্রকর হিসাব দেন— চার-পাঁচ বছর আগে এক ট্রাক মাটি কিনতে খরচ হত ১৪-১৫ হাজার টাকা। এখন সেই দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪-২৫ হাজারে। কয়েক বছরে দ্বিগুণ দাম হয়েছে দড়ি, বাঁশ, খড়ের। অন্যান্য জেলা থেকে কাজ করতে আসা মজুরদের মজুরি দৈনিক গড়ে হাজার টাকা। সব কিছু সামলে ১০ ফুটের একটি দুর্গাপ্রতিমা বেচে পাওয়া যায় কমবেশি ২৭ হাজার টাকা। বছর পাঁচেক আগেও দাম কার্যত একই জায়গায় ছিল। লাভের অঙ্ক কতটা কমেছে, এতেই স্পষ্ট। মৃৎশিল্পীদের একাংশের বক্তব্য, খদ্দের ধরে রাখতে লাভের অঙ্ক কমিয়েই তাঁরা ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অনেকেই বংশ পরম্পরায় এই কাজ করেন। তাঁদের খেদ, ভোটের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকেরা এসে পরিস্থিতি শুধরানোর ব্যাপারে চেষ্টার আশ্বাস দেন। কিন্তু আখেরে কিছুই হয়নি। দুর্গাপুজোর আগে কাঁচামাল কিনতে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। যা মেটাতে গিয়েও খরচ হয় লাভের কিছুটা অংশ। শিল্পীদের একাংশ মনে করেন, পর্যাপ্ত প্রচার না থাকাও তাঁদের বড় সমস্যা। আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় একটু বড় পুজোর কর্মকর্তারা অধিকাংশই ছুটে যায় কলকাতার কুমোরটুলিতে। মার খায় স্থানীয় চিত্রকরপাড়া। এই আবহে মূল্যবৃদ্ধি আর অনটনে অনেক প্রতিমা তৈরির পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম আর আগ্রহী নয় এই ব্যবসায়।

শক্ত হাতে হাল ধরা না গেলে ভবিষ্যতে আরও সমস্যায় পড়বে হাওড়ার ‘কুমারটুলি’, আশঙ্কা শিল্পীদের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2023 Kumortuli Howrah

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}