Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Hooghly

ডিম পাড়া তিনটি হাঁসের অস্বাভাবিক মৃত্যু! থানায় চুঁচুড়ার ইতি, কলকাতার ল্যাবে হবে ময়নাতদন্ত

পুলিশ ‘তদন্ত’ করে দেখার পর হাঁসগুলি নিয়ে ইতিকে পশু হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে যায়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বলা হয় পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতিরূপ লাগবে।

duck died

হাঁস হাতে ইতি বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৩৩
Share: Save:

স্বামী রোগশয্যায়। এক মাত্র ছেলে ভুগছে দুরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সারে। পাঁপড় ভাজা আর ঝালমুড়ি বিক্রি করে কোনও রকমে সংসার চলে। আর ছিল ১০টি হাঁস। তাদের ডিম বিক্রি করে আরও কিছু বাড়তি রোজগার হত। কিন্তু শনিবার ৩টি হাঁসের ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ চুঁচুড়ার সিংহীবাগানের বাসিন্দা ইতি বিশ্বাসের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। তাঁর পালিত তিন হাঁসের মৃত্যুর কারণ জানতে হুগলি প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন ইতি। এমন অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। হুগলি জেলার বাসিন্দা ইতি জানান, শনিবার সবক’টি হাঁসেরই স্বাস্থ্য ভাল ছিল। বিকেলে হাঁসেদের ঘর খুলে দিয়েছিলেন ঘুরে বেড়ানোর জন্য। কিন্তু তখনই দেখেন, তিনটি হাঁস ছটফট করছে। তারা ওই অবস্থাতেই পাশের জলাশয়ে নেমে যায়। কিন্তু ইতির কাছে ব্যাপারটা ভাল ঠেকেনি। তিনি হাঁসদের খেতে দেওয়া মুড়ির প্যাকেট তুলে দেখেন, তাতে কটু গন্ধ। সন্দেহ হয়। তার পর তিনটি হাঁস মারা যায়। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে বিষয়টি জানান ইতি। কিন্তু তিনি খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে ওই মহিলাকে পুলিশের কাছে যেতে বলেন। ইতিও পায়ে পায়ে থানায় চলে যান।

অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ইতির বাড়িতে আসে। ‘তদন্ত’ করে দেখার পর হাঁসগুলি নিয়ে ইতিকে পশু হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তারা চলে যায়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বলা হয় পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতিরূপ লাগবে। এমন ভাবে ছোটাছুটি করতে করতেই দিন দুই পেরিয়ে যায়। ইতির সন্দেহ, তাঁর পালন করা হাঁসগুলিকে কেউ মুড়িতে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলেছে। মহিলার অভিযোগ, ‘‘এক প্রতিবেশীর সঙ্গে মাস ছয়েক আগে অশান্তি হয়েছিল। বিষ কে দিয়েছে, তা জানি না। তাই কারও নামে অভিযোগ করিনি।’’ তবে হাঁসগুলোকে যে খুন করা হয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। তাই ময়নাতদন্ত চেয়েছেন ইতি। এই খবর পেয়ে হুগলি জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ নির্মাল্য চক্রবর্তী ইতিকে নিয়ে থানায় যান। সেখানে ডায়েরি করার পর পশু হাসপাতালে যান তাঁরা। নির্মাল্যই ময়নাতদন্তের জন্য হাঁসগুলির মৃতদেহ কলকাতা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

কাঁদো কাঁদো মুখে ইতি বলেন, ‘‘সে দিন হাঁসের ঘর খুলতেই খাবার দেখতে পেয়ে ওরা খেতে শুরু করে। কিন্তু ওই মুড়ির মধ্যে জল দিয়ে কেউ বিষ মাখিয়ে রেখে গিয়েছিল। আমি কিছু ক্ষণ পরে এসে দেখি হাঁসগুলো টলোমলো করতে করতে জলে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ কেন এমন হল? তখন মুড়ির গন্ধ শুঁকতেই দেখি খারাপ গন্ধ বেরোচ্ছে। এর পরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া মুড়ির ঠোঙাটা রেখে দিই। বুঝতে পারি, কেউ শত্রুতা করে এটা করেছে। মরা হাঁসগুলিকে বরফ চাপা দিয়ে রেখে দিই।’’ নির্মাল্য জানান, এক জন গরিব মহিলার কাছে তার গৃহপালিত পশুপাখির গুরুত্ব কতটা, তা তিনি জানেন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর তিনটে হাঁস মারা গিয়েছে। আইনের কচকচানিতে তিন দিন ধরে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ময়নাতদন্তের জন্য জেলা প্রাণীসম্পদ দফতরের সেই পরিকাঠামো নেই। কোনও পশু বা পাখিকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হলে তার ময়নাতদন্তেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। তবে কলকাতার বেলগাছিয়া স্টেট ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে সেই ব্যবস্থা আছে। সেখানেই পাঠিয়েছি।’’ প্রশাসনের তরফে সাড়া মেলায় ইতিবাচক ইতি। তিনি বলেন, “সুবিচারের অপেক্ষা করছি।’

অন্য বিষয়গুলি:

Duck mystery death Postmortem
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE