ঘটনাচক্রে মিলে গিয়েছিল দু’টি দিন। আর সেই ‘সুযোগ’ কাজে লাগিয়ে পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণ রক্ষায় অভিনব বার্তা দিলেন হাওড়ার বাড়মংরাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা।
সরস্বতী পুজোর পাশাপাশি রবিবার ছিল বিশ্ব জলাভূমি দিবস। সেই উপলক্ষে উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের হাটগাছা-১ পঞ্চায়েতের ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উদ্ধোধন করা হল অভিনব ‘জলাভূমি ও বাস্তুতন্ত্র (ওয়েটল্যান্ড অ্যান্ড ইকোলজি) দেওয়াল’। সেই সঙ্গে প্রচার কর্মসূচির আবেদন জানানো হল, হাওড়ার জলাভূমির অন্যতম বাসিন্দা তথা বাংলার রাজ্যপ্রাণী বাঘরোল (মেছো বিড়াল বা ফিশিং ক্যাট) রক্ষার।
কর্মসূচির উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি ‘নারীরত্ন’ পুরস্কারপ্রাপ্ত বাঘরোল গবেষক তিয়াসা আঢ্য এবং জলাভূমি বিশেষজ্ঞ, মৎস্য দফতরের আধিকারিক নারায়ণ বাগ এবং জেলার পরিবেশ ও বন্যপ্রাণপ্রেমী সংগঠন ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশনের শুভ্রদীপ ঘোষ। রাজ্যপ্রাণী হিসাবে তকমা পাওয়া বাঘরোলের দক্ষিণবঙ্গে অন্যতম বিচরণক্ষেত্র হাওড়ার দামোদর এবং রূপনারায়ণ নদের অববাহিকার নিচু জলাজমি। বন দফতর ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির ধারাবাহিক প্রচারে পিটিয়ে বা বিষ দিয়ে মারার সামান্য কমলেও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঘরোলের বসতি জলাজমি ধ্বংসের ধারাবাহিক ঘটনা। আর তা নিয়ে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনায় আলোচনায় উঠে এল উদ্বেগ।
হাওড়া জেলায় জলাভূমি দীর্ঘদিন ধরেই জীবন ও জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই হাওড়া জেলার দায়িত্ব জলাভূমিকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানান তিয়াসা। তিনি বলেন, ‘‘হাওড়া জেলার জলাভূমিতে যে পরিমাণ জীববৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়, গোটা পৃথিবীর তার তুলনা মেলা ভার।’’ নারায়ণ বলেন, ‘‘অন্তত এক শতাংশ মিষ্টি জলকে আমাদের বাঁচাতেই হবে।’’ শুভ্রদীপের কথায়, ‘‘প্রোটিন-সহ নানা সুষম খাদ্য আমরা জলাভূমি থেকেই পেয়ে থাকি। জেলার গ্ৰামীণ অর্থনীতি জলাভূমির উপর নির্ভরশীল। জলাভূমি আর তার জীববৈচিত্রকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।’’
ওই কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক রাজদূত সামন্ত বলেন, ‘‘আমরা বিদ্যালয়ে সারা বছর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমান্তরাল ভাবে সামাজিক ও পরিবেশ শিক্ষার পাঠদান ও চর্চা করে থাকি । আজ হাওড়ার নিজস্ব সত্তাকে তুলে ধরার জন্য ও সমাজে মানুষের মধ্যে জলাভূমি ও তার জীববৈচিত্র্য নিয়ে সচেতনতার লক্ষে আমাদের এই উদ্যোগে যে ভাবে মানুষের সাড়া পেয়েছি, তাতে আমরা আপ্লুত।’’ তাঁর মতে, লোকালয়ের গাঁ ঘেষে থাকা বাঘরোলদের ভবিষ্যৎ যে ‘গ্রামের আগামীর মুখদের’ সঙ্গেই জড়িয়ে। তাই হাওড়ার জলাভূমি আর তার বাসিন্দা বাঘরোলদের সংরক্ষণের জন্য চাই ধারাবাহিক সচেতনতা প্রচার।