বোড় তালডাঙার প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।
বছরখানেক আগে চন্দননগরের একটি বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজোর ‘ক্যাচলাইন’ ছিল দেখুন মাথা উঁচু করে। মানে দুর্গাপুজো নয় (কলকাতার বড় দুর্গাকে বাদ দিলে) যে, সোজা চোখে আরাম করে ‘ঠাকুর’ দেখা যাবে। চন্দনগরের জগদ্ধাত্রী দীর্ঘাঙ্গি। তাকে মাথা উঁচু করে ঘাড় কাত করে দেখতে হবে। উচ্চতাই এর মূল বৈশিষ্ট্য। দৈর্ঘ্যই এ পুজোর আকর্ষণ।
চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বর মিলিয়ে ৩০০টিরও বেশি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি নিয়ন্ত্রণ করে ১৭১টি পুজো। এই পুজোগুলির কোনও প্রতিমার উচ্চতা ২০ ফুট, কোনওটির ২৫ ফুট আবার কোনও প্রতিমা ২৮ ফুটের। তার বেশি উঁচু করা যায় না। শোভাযাত্রার অসুবিধার কথা ভেবে কেন্দ্রীয় কমিটি প্রতিমার মাপ ২৮ ফুটেই বেঁধে দিয়েছে।
কিন্তু কেন এত বড় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা হয় চন্দননগরে? এ নিয়ে নানা মত রয়েছে। চালু রয়েছে হরেক কাহিনিও। চন্দননগরের মতোই জগদ্ধাত্রী পুজো বিখ্যাত কৃষ্ণনগরে। ইতিহাসও পুরনো। নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীই চন্দননগরের চাউল পট্টিতে জগদ্ধাত্রী পুজো করেন। সেই পুজো আজও হয় ‘আদি মা’ নামে। অথচ সেই কৃষ্ণনগরের থেকেও আকারে বড় চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী।
কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সম্পাদক নিমাইচন্দ্র দাস এর একটি ব্যখ্যা দিয়েছেন। ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে নিমাই বলেন, ‘‘আমার বয়স এখন বাহাত্তর। খুব ছোটো থেকেই দেখছি চন্দননগরের বড় বড় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা। পরে পুজোর সঙ্গে যুক্ত হই। তখন বড় প্রতিমার কারণ জানতে চেষ্টা করি। আসলে বাগবাজারে সে আমলে বেশ কিছু মুটে মজুর থাকতেন। তাঁরা মূলত উড়িষ্যার। ঘরামির কাজ, রান্নার কাজের পাশাপাশি তারা মজদুরির কাজও করতেন। জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনে তাঁদের কাজে লাগানো হত। কাঁধে করে প্রতিমা বয়ে নিয়ে যাওয়ায় তাঁরা ছিলেন ওস্তাদ। তাঁরাই বলতেন আরও বড় প্রতিমা হলে ভাল হয়। সেই থেকেই প্রতিমার মাপ বড় হতে থাকে।’’
আর একটি মতে, তখন থিম পুজো ছিল না। চন্দননগরের বিখ্যাত আলোর বাহারও ছিল না। প্রতিমাতেই থাকত নজর। প্রতিমার আকার বড় করার প্রতিযোগিতা থেকেই আজ এত বড় বড় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা হয় চন্দননগরে।
বাগবাজার শহরের অন্যতম প্রাচীন পুজো কমিটি। তাদের ১৮৭ বছরের পুজো। উঁচু প্রতিমার ধারা বজায় রেখে চলেছে তারা। বাগবাজারের পাশাপাশি ফটকগোড়া, জ্যোতির মোড় তেমাথা, হালদার পাড়া। আদি, খলিসানী, বিদ্যালঙ্কার , পালপাড়ার প্রতিমাও সুউচ্চ। তবে এখন প্রায় সব বারোয়ারিই বড় বড় প্রতিমা তৈরি করে।
বড় প্রতিমার জন্য এত দিন চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রার জন্য দশমী ও একাদশীর দিন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে হত। বড় বড় প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় যাতে বিদুতের তারে ঠেকে বিপদ না হয়, তার জন্যই আগাম ব্যবস্থা। পুজোর জন্য সেই দু’দিনের কষ্ট সহ্য করতেন চন্দননগরবাসী। তাঁদের সেই সমস্যার সমাধানে রাজ্যের মন্ত্রী তথা চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেনের চেষ্টায় ১০৫ কোটি টাকার প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে। নতুন প্রকল্পে চন্দননগরের বিদ্যুতের তার মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে যাতে চার দিনের উৎসবের শেষে আলোর শহরে অন্ধকার না নামে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy