Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

‘চম্পাদেবীর শহর’ অশান্তিতে শিরোনাম হতে চায় না

মঙ্গলবার আমার গৃহ-সহায়িকার মুখে শুনলাম, শ্রীরামপুরের হরিজন বস্তিতে রাতের অন্ধকারে এক দল অসহায় মানুষ রিষড়ার বস্তি ছেড়ে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন।

রিষড়ার সন্ধ্যাবাজারে শুরু হয়েছে বিকিকিনি। বুধবার সকালে। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ

রিষড়ার সন্ধ্যাবাজারে শুরু হয়েছে বিকিকিনি। বুধবার সকালে। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ

ভাস্কর চৌধুরী
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫৬
Share: Save:

শ্রীরামপুর কলেজের বাংলার বিভাগীয় প্রধান

গঙ্গাপাড়ের জনপদ রিষড়াকে এখন অনেকেই হয়তো কল-কারখানার শহর বলেই চেনেন। যেখানে জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ এসে বসবাস শুরু করেছিলেন বহু দিন আগেই। একদা গ্রিক বেনিয়াদের দখলে থাকা রিষড়ার জনবিন্যাস বদলেছে ব্রিটিশ আমলে চটকলগুলি গড়ে ওঠার সময় থেকেই। ঠিক যে ভাবে হালিশহর, কাঁচরাপাড়া, জগদ্দল বা হাওড়ায় কাজের সূত্রে বাসা বেঁধেছেন ভিন্‌ রাজ্যের মানুষ। এই মিশ্র জনবসতি রিষড়াকে একটা ‘মিনি ভারতবর্ষ’-এর আদল দিয়েছে। আর সেই মিলেমিশে থাকা নানা ভাষী, নানা ধর্মের মানুষ নিজেদের মধ্যে খুচরো ঝুটঝামেলা ঘটালেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হাত পোড়াতে চায়নি কোনও দিন। চানও না।

মঙ্গলবার আমার গৃহ-সহায়িকার মুখে শুনলাম, শ্রীরামপুরের হরিজন বস্তিতে রাতের অন্ধকারে এক দল অসহায় মানুষ রিষড়ার বস্তি ছেড়ে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন। একটা আতঙ্ক আর অবিশ্বাস তাড়া করছে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকেই। চেনা মানুষদের ঘিরে দানা বাঁধছে সন্দেহ। কিন্তু রামনবমী তো আদতে একটা জন্মদিন পালনের উৎসব। জন্মাষ্টমী, ক্রিসমাস বা বুদ্ধপূর্ণিমা যে মিলনের আবহ রচে, তা কেন রামনবমীতে থাকবে না?

ঋষিদের বসবাস বা ঋষিবাটী থেকেই রিষড়া শব্দের উৎপত্তি, এ কথা বলেন অনেক আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ। ‘তিন শতকের রিষড়া ও তৎকালীন সমাজচিত্র’ বইতে শ্রীকৃষ্ণগোপাল পাকড়াশি জানিয়েছেন— সপ্তদশ শতক থেকেই রিষড়ায় হিন্দু পরিবারের পাশে ইসলাম ধর্মের মানুষজন থাকতে শুরু করেন।

সপ্তদশ শতকের কবি রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গলেও এই ঋষিবাটী অঞ্চলের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: ‘পীর ইসমাইলি সোঙরিয়া পথ চলি যায় / দৈবে নাহি মারে তারে বাঘে নাহি খায়। / বন্দিব বড়খাঁ গাজী ঋষিবাটি গাঁ / নিজবাটী বন্দিব পেঁড়োর শুতি খাঁ’।

ব্রাহ্মণ কবির কলমে ইসলাম ধর্মগুরুর প্রতি এই শ্রদ্ধাই আমাদের ধর্মীয় উত্তরাধিকার। পিরকে স্মরণ করলে বাঘের হাত থেকে বাঁচা যাবে, এই বিশ্বাস বাংলার ধর্মীয় ‘ন্যারেটিভ’কে অনন্যতা দিয়েছিল। ভালবাসা আর বিশ্বাস থেকেই তো এক বেরাদরি জন্ম নেয়। আজকের রিষড়ায় তা ফিরে আসুক।

রিষড়ার ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায় চম্পাদেবীর গল্প ছাড়া। হোসেন শাহের আমলে সামন্ত মুকুট রায় ও লীলাবতীর একমাত্র কন্যা চম্পা রিষড়ার আঞ্চলিক দেবীতে রূপান্তরিতা। যাঁর সমাধি-বেদিতে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পুজো দিয়ে থাকেন। হিন্দুরা বলেন, ‘‘চম্পা মাই’, মুসলিমরা ‘চম্পাবিবি’। এই লোকদেবীর নামেই ‘চম্পা খাল’ বা ‘চম্পা রোড’ শব্দের জন্ম। যেখানেে অবিবাদে চলে আসছে উভয় সম্প্রদায়ের পূজার্চনা। মাহেশ ও রিষড়ার সংযোগস্থলে চম্পা খাল আজ অবলুপ্ত। কিন্তু আজকের রিষড়া যেন সেই পুজোর সংস্কৃতি না ভোলে।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2023 Rishra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy