চলছে বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।
জল্পনার পালা শেষ। তিন-তিনটে বছর বন্ধ থাকার পরে অবশেষে আগামী ৫ মার্চ খুলতে চলেছে রিষড়ার ওয়েলিংটন জুট মিল। কর্তৃপক্ষ জানান, ধাপে ধাপে উৎপাদন বাড়বে। সব শ্রমিক কাজ পাবেন। মিল খোলার সিদ্ধান্তে ভরা বসন্তে ফুরফুরে হাওয়া গঙ্গাপারের জুট মিলের শ্রমিক মহল্লায়। চোখের জল মুছে উৎপাদনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে তৈরি শ্রমিকেরা।
বেশ কয়েক বছর ধরে মিলের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। আর্থিক সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। সেই থেকেই উৎপাদন বন্ধ। এ নিয়ে অনেক আন্দোলন, গোলমাল হয়েছে। অবশেষে প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে ফের যন্ত্র ঘুরতে চলেছে মিলে। শ্রমিকদের একাংশের বক্তব্য, উৎপাদন চালুর ব্যাপারে যথেষ্ট ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কর্তৃপক্ষ। মিল ভাল ভাবে চলুক, চাইছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই।
বুধবার শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মিল খোলার সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রী ছাড়াও রাজ্যের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর রায়, শ্রীরামপুরের যুগ্ম শ্রম কমিশনার বৈঠকে ছিলেন। মিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নির্মল পুজারা, ডিরেক্টর হর্ষবর্ধ ওয়াধয়াও উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট (ওয়ার্কস) অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়, সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট সুব্রতকুমার আদক, জেনারেল ম্যানেজার পূর্ণেন্দু জ্যোতি কুন্ডু, প্রদীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ও ছিলেন। চারটি শ্রমিক সংগঠনের (সিআইটিইউ, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, আইএনটিটিইউসি) প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন।
শ্রম দফতর ও মিলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, মিল খোলার পরে উৎপাদনের কাজ বিভিন্ন বিভাগ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে চালু হবে। তিন সপ্তাহের মধ্যে সার্বিক ভাবে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে সব শ্রমিককে কাজে নেওয়া হবে। এই মুহূর্তে মাস্টার রোলে ১৬৮৬ জন শ্রমিক আছেন। প্রেসিডেন্ট (ওয়ার্কস) অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিক ভাবে ৩০ টন উৎপাদন হবে। ধাপে ধাপে তা বাড়িয়ে পূর্ণমাত্রা, অর্থাৎ, ১০০ টনে পৌঁছনোই লক্ষ্য।
বৈঠকে থাকা সিআইটিইউ নেতা সুমঙ্গল সিংহ, মিলের শ্রমিক তথা এআইটিইউসি নেতা ভোলানাথ কর্মকার জানান, কাল, শুক্রবার মিলের অনুমোদিত তিন শ্রমিক সংগঠনের (এআইটিইউসি, সিআইটিইউ, আইএনটিইউসি) তরফে ‘গেট মিটিং’ করে মিল খোলার খবর শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে। মিল খোলার সিদ্ধান্তের খবর জেনে এ দিন সন্ধ্যাতেই অনেক শ্রমিক বন্ধ গেটের সামনে থেকে ঘুরে যান। তাঁরা জানান, এত দিন পরে মিল খোলার খবরে স্বস্তি মিলেছে। বৈঠকে উপস্থিত এআইটিইউসি অনুমোদিত ফেডেরাল চটকল মজদুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই দিনের অপেক্ষাতেই দিন গুনছিলেন শ্রমিকেরা।’’
বছর তেতাল্লিশের শিবশঙ্কর দত্ত ২০০০ সাল থেকে এই জুট মিলের শ্রমিক। কাজ করেন ‘বিনকল’ বিভাগে। মা, স্ত্রী এবং সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। ফোনে শিবশঙ্কর বললেন, ‘‘প্রথমে কোভিড। তার পরে তিন বছর
মিল বন্ধ। কী যে দুর্বিষহ অবস্থা! এ মিল, সে মিলে বদলি শ্রমিকের কাজ করেছি। সপ্তাহে হয়তো দু’দিন কাজ পেয়েছি। কোনও রকমে সংসার চলেছে। এ বার মিল খুলছে। কষ্ট দূর হবে। খুব আনন্দ হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy