Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Hooghly

অভিযানের রাশ আলগা, ফিরছে পাতলা ক্যারিব্যাগ, বিকল্পের জোগান নিয়েও উঠছে প্রশ্ন

অনেক জায়গাতেই প্রচার-পর্বে আপাতত ইতি পড়েছে! বহাল তবিয়তে ফিরেছে পাতলা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, থার্মোকলের থালা-বাটি। পুরসভার নজরদারি উধাও।

নিষিদ্ধ প্লাস্টিক-ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছেই।  কামারপুকুর ডাকবাংলো বাজারে (বাঁ দিকে)। চুঁচুড়ার মল্লিক কাশেম হাটে। নিজস্ব চিত্র

নিষিদ্ধ প্লাস্টিক-ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছেই। কামারপুকুর ডাকবাংলো বাজারে (বাঁ দিকে)। চুঁচুড়ার মল্লিক কাশেম হাটে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:০৮
Share: Save:

কথা ছিল, নির্দিষ্ট মাত্রার কম পুরু প্লাস্টিক-ক্যারিব্যাগ ব্যবহার হবে না। থার্মোকলের থালা-বাটিরও দিন ঘুচবে। এ নিয়ে জোর প্রচার হয়েছিল হুগলির নানা প্রান্তে। মিটিং-মিছিল, বাজারে হানা দেওয়া, পরিবেশ বিশেষজ্ঞকে এনে সেমিনার— হয়েছিল সব শহরেই।

অনেক জায়গাতেই প্রচার-পর্বে আপাতত ইতি পড়েছে! বহাল তবিয়তে ফিরেছে পাতলা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, থার্মোকলের থালা-বাটি। পুরসভার নজরদারি উধাও। জেলা জুড়েই অসচেতনতার চেনা ছবি। নিয়ম না মানা লোকজনকে দুষেও সচেতন মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, পুরসভার ‘লাগাতার অভিযান’ কোথায় গেল?

দিন কয়েক আগে ব্যান্ডেলে একটি পুজোয় থার্মোকলের বাটিতে প্রসাদ দেওয়া হয়। রাস্তায় পড়ে থাকা সেই বাটির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বিজ্ঞানকর্মী সন্দীপ সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘যে ভাবে প্রচার শুরু হয়েছিল, আশান্বিত হয়েছিলাম। প্রচার-পর্ব এত স্বল্প সময়ের জন্য হবে, ভাবিনি। ক্ষতিকর জিনিস যে ভাবে ফিরে এসেছে, খারাপ লাগছে।’’ ব্যান্ডেল স্টেশনের কাছে কচুরি দেওয়া হচ্ছে আগের মতোই থার্মোকলের বাটিতে। লোকজন দিব্যি খাচ্ছেনও।

গত পয়লা জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ। প্রচারের ফলে বিভিন্ন শহরে ওই ক্যারিব্যাগ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষাকৃত মোটা ক্যারিব্যাগ বা কাপড়ের ব্যাগ দিচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই বাজারে আসছিলেন ব্যাগ হাতে। কিন্তু, নজরদারি শিথিল হতেই জেলা সদর চুঁচুড়া থেকে চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর, চাঁপদানি, বৈদ্যবাটী, শ্রীরামপুর, রিষড়া— নিষিদ্ধ ক্যারিব্যাগ ফিরেছে সর্বত্র। কোথাও চোরাগোপ্তা, কোথাও খুল্লমখুল্লা। আনাজ, মাছের, ফুলের দোকান, মুদিখানা— সব জায়গাতেই এক ছবি।

তবে, বিকল্পের জোগান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। শ্রীরামপুরের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘‘কাপড়ের ব্যাগের দাম বেশি, ভাল মানের আসছেও না। মোটা ক্যারিব্যাগ দিচ্ছি। অনেকেই সেই পাঠ তুলে আগের দিনেগ ফিরে এসেছেন। নজরদারিও বন্ধ।’’

পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, পাতলা প্লাস্টিক-ক্যারিব্যাগ ব্যবহার আগের থেকে অনেক কমেছে। কিন্তু, যে ভাবে ফের তা মিলতে শুরু করেছে, পুরসভা হাত গুটিয়ে থাকলে পরিস্থিতি আগের মতোই হয়ে যাবে। বিষয়টি মানছেন পুরকর্তারা। তবে, প্রচার কার্যত বন্ধ, তাঁরা মানতে নারাজ। যদিও, তাঁদের একাংশ এখন মানুষের শুভবুদ্ধির দিকে তাকিয়ে থাকতে চাইছেন। শ্রীরামপুরের পুর-পারিষদ (জঞ্জাল) পিন্টু নাগ বলেন, ‘‘অনেকেই সচেতন হয়েছেন। কিন্তু এক শ্রেণির ক্রেতা-বিক্রেতা বেপরোয়া, এটা দুর্ভাগ্যের। আমাদের তরফে বাজারে অভিযান চালু আছে।’’

চুঁচুড়ার মল্লিক কাশেম হাট, ব্যান্ডেল বা চন্দননগরের বিভিন্ন বাজারেও একই সমস্যা। চুঁচুড়ার উপ-পুরপ্রধান পার্থ সাহা বলেন, ‘‘জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ শুধরোচ্ছেন না।’’ প্লাস্টিক-ক্যারিব্যাগ আটকে বৈদ্যবাটী, চাঁপদানির মতো শহরে নিকাশি নালা আটকে যাচ্ছে। চাঁপদানির পুরপ্রধান সুরেশ মিশ্রের দাবি, বাজারে, বাড়ি গিয়ে পুরকর্মীরা মানুষকে সচেত‌ন করছেন। নিষিদ্ধ ক্যারিব্যাগ রেখে কোনও বিক্রেতা তিন বারের বেশি ধরা পড়লে, ১৫০০ টাকা জরিমানা নেওয়া হচ্ছে। ১৫ জনের থেকে এই পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পুলিশ আটক করেছে, এমনও হয়েছে। বাঁশবেড়িয়া পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্যবসায়ীদের থেকে প্রায় ১৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আরামবাগে এই পরিমাণ ৩৮ হাজার টাকা। এখানে প্রায় ৬০ কেজি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলেও পুরপ্রধান সমীর ভাণ্ডারী জানিয়েছেন।

পান্ডুয়া, আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন ব্লক-সহ গ্রামীণ এলাকার প্রায় সর্বত্রই ফিনফিনে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার অবাধে চলছে। কামারপুকুরে সম্প্রতি গোঘাট-২ ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েতের তরফে অভিযান চললেও রাশ ফের আলগা। বিডিও দেবাশিস মণ্ডলের অবশ্য দাবি, ‘‘ধারাবাহিক প্রচারে কিছুটা সুফল মিলেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hooghly Plastic carry bags
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy