আরামবাগের হাসপাতাল মোড়ে মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
প্রায় চার বছরের ব্যবধানে ফের আরামবাগ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে রোগী পালানোর ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার সকালে। শনিবার সন্ধ্যায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে গোঘাটের খাটুলে রাস্তার ধারের একটি গাছতলা থেকে উত্তম ঘোষ (৫২) নামে ওই রোগীর মৃতদেহ মেলে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রোগীর নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে শনিবার রাত থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়। ময়নাতদন্তের পর রবিবার বিকেলে মৃতদেহ নিয়ে পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় মানুষ হাসপাতাল চত্বরে একদফা বিক্ষোভ দেখান। তারপরে মূল ফটকের বাইরে হাসপাতাল রোডে মৃতদেহ রেখে সুপারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। তাতে শামিল হয় বিজেপিও। পুলিশের অনুরোধ মিনিট কুড়ি পরে বিক্ষোভ থামে।
হাসপাতালের সুপার সত্যজিৎ সরকার বলেন, “বিষয়টি দেখতে তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।” হাসপাতালের সার্বিক দায়িত্বে থাকা আরামবাগ প্রফুল্লচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ রায় বলেন, “আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এ রকম ঘটনায় আমাদের দায়িত্ব থাকেই। গাফিলতিগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তাকর্মীদের জিঙ্গাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই সময় আরও যে সব স্বাস্থ্যকর্মী ডিউটিতে ছিলেন, তাঁরা কী করছিলেন, সেটাও দেখা হচ্ছে। সেইমতো পদক্ষেপ করা হবে।” রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা আরামবাগের প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “জেল থেকে কয়েদি পালানোর মতোই এটা একটাদুর্ঘটনা। এ রকম ঘটনা রুখতে আমরা সচেষ্ট হচ্ছি।”
মৃত উত্তমের বাড়ি পুরশুড়ার মসিনানে। তিনি আড়তে আলু বাছাইয়ের কাজ করতেন। গত বুধবার রাতে তাঁর শরীর ফুলে যায় এবং পেটে যন্ত্রণা হওয়ায় ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মৃতের ভাই সুরজিৎ এবং কাকা অমিতের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের নিরাপত্তার অভাবেই প্রিয়জনকে হারাতে হল। চিকিৎসা সম্পূর্ণ হল না, উল্টে ঠান্ডায় কষ্ট পেয়ে ওঁকে মরতে হল।’’
শনিবার রাতে হাসপাতালের গেটে স্থানীয় বিধায়ক বিজেপির মধুসূদন বাগের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়েছিল। বিধায়কের অভিযোগ, ‘‘দেখলে মনে হবে, হাসপাতালে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা। তারপরেও রোগী পালাচ্ছেন এবং বাইরে বেঘোরে মারা যাচ্ছেন। এমনকি পিছনের দরজায় তালাও থাকছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি স্পষ্ট। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি করা হয়েছে।’’
হাসপাতাল এবং ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের স্ত্রী অতসী প্রথম থেকেই হাসপাতালে ছিলেন। স্বামীকে পুরুষ ওয়ার্ডে রাখায় রাতে নিজে মেয়েদের বিশ্রাম কক্ষে থাকতেন। শুক্রবার সকাল ৬টা নাগাদ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখেন, শয্যায় স্বামী নেই। তিনি খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান।
অতসী বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা যায়, ভোর ৫টা ১০ মিনিট নাগাদ সিঁড়ি দিয়ে নেমে স্বামী ঘেরা চত্বরের পিছনের গেট দিয়ে পালান। পিছনের গেটে তালা ছিল না।”
এর পরই হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। শনিবার সন্ধ্যায় গোঘাট থানার ফোন পেয়ে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, উত্তমের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। খাটুলে প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যবসায়ী জানান, দুপুরে তিনি উত্তমকে গাছের তলায় বসে থাকতে দেখেছিলেন। বিকেলে সেখানেইশুয়ে থাকতে দেখেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত একই রকম ভাবে থাকতে দেখেকাছে গিয়ে কোনও সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy