কোভিডের শুরুতে ঘরে ফিরছেন শ্রমিকরা। ব্যান্ডেল স্টেশনে। ফাইল চিত্র
এ বারের বাজেটকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে দাবি করেছে কেন্দ্রের শাসক দল। বিরোধী দলগুলি সমালোচনা করেছে। এই স্তুতি ও নিন্দার স্রোতে কেউ বললেন না, দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্রাত্য থেকে যাওয়ার কথা। তা হল পরিবেশ এবং প্রান্তিক মানুষের জীবন-জীবিকা।
মধ্যবিত্তের করে ছাড় দেওয়া নিয়ে উন্মাদনা তৈরি হল। অথচ, দেশের অভুক্ত, প্রান্তিক মানুষ, যাঁরা আয়কর দেওয়ার মতো উপার্জন করতেই সক্ষম নন, তাঁদের দুঃখ-যন্ত্রণা লাঘবের কথা উচ্চারিত হল না। অমীমাংসিত থেকে গেল পরিবেশ বিষয়ক অত্যন্ত জরুরি বিষয়ও।
এই মুহূর্তে ভারতের শহর ও গ্রামাঞ্চলের দূষণচিত্রের কয়েকটি বিষয়ে চোখ রাখা যাক।
উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি ছাড়া দেশের প্রায় সব নদীর জলই দূষণে আক্রান্ত। নদীদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন, সুনির্দিষ্ট দফতর থাকলেও কার্যকারিতা হতাশাজনক। নদীর নির্মলতা ফিরিয়ে আনতে বহু প্রকল্প ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে প্রয়োগ জিজ্ঞাসা চিহ্নের মুখে। আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত দেশের বিভিন্ন জলাভূমির অবস্থাও তথৈবচ।
দেশের একটি শহরেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক নিয়মে চলছে না। কঠিন ও তরল বর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় থেকে যাচ্ছে। ফলে, দূষণ বাড়ছেই। এই নিয়েও বাজেটে বিশেষ উদ্বেগের চিহ্ন নেই।
দেশের প্রত্যেক বড় শহর বায়ুদূষণে আক্রান্ত। বাজেটে সবুজ উন্নয়নের রূপরেখার কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে পরিবেশ সুরক্ষা আইনের পরিবর্তন ঘটিয়ে কার্যত পরিবেশবিরোধী কার্যকলাপকেই উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। যেমন, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সমুদ্র সৈকতে বিস্তীর্ণ অরণ্য সম্পদ ধ্বংস করে শিল্প তৈরির মহড়া চলছে! অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সৌরশক্তিতে চলা জিনিসপত্রের উৎপাদন বাড়ানো, যার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তা নিয়ে এ ব্যাপারেও বাজেট নিশ্চুপ।
বিস্তৃত অরণ্য, জলাশয়, নদী, সমুদ্র নিয়ে অসামান্য জীববৈচিত্র রয়েছে আমাদের দেশে। কিন্তু, জীববৈচিত্র রক্ষা এবং উন্নয়নের বার্তা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। বিলীয়মান জীববৈচিত্র আরও সঙ্কটের পথে।
পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম আন্তর্জাতিক শর্ত দারিদ্র দূরীকরণ ও পরিবেশবান্ধব জীবনের মানোন্নয়ন। সংবিধানে এ নিয়ে নানা কথা লেখা থাকলেও বাজেট-নির্মাতারা প্রায় ভুলেই গেলেন অগণিত শ্রমজীবী মানুষের কথা, যাঁরা সভ্যতার অন্যতম ধারক-বাহক।
মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের আয়করে পুনর্বিন্যাস নিয়ে বাজেট-বক্তৃতা টেবিল চাপড়ে প্রশংসা করলেন শাসক দলের সাংসদরা। কিন্তু, তাঁদের মনে হল না, অগণিত শ্রমজীবী মানুষের ইপিএফ পেনশন মাত্র ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ সমিতি-সহ বিভিন্ন সংস্থা বারবার আবেদন করেছে, শ্রমিকের ন্যূনতম পেনশন ৫০০০ টাকা করা হোক। বাজেটে এই প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়নি। অর্থাৎ, শ্রমজীবী মানুষের ন্যূনতম পেনশন এ বারেও বাড়ল না।
ভারতীয় সংবিধানের নিয়মনীতি ধরে দেশের প্রত্যেক সক্ষম নাগরিকের বছরে ১০০ দিন কাজ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক মানুষ তা পান না। পেলেও, সরকারি হারে মজুরি মেলে না। বন্ধ কারখানার শ্রমিক কী ভাবে বাঁচবেন, সে ব্যাপারে বাজেটেকোনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে একটি আইনতৈরি হয়, যার মাধ্যমে বন্ধ কারখানার শ্রমিক একটা ভাতা পেতে পারেন বা পেয়ে থাকেন। কেন্দ্রের এমনকোনও আইন নেই, যা বর্তমানে অত্যন্ত জরুরি।
করোনা-কালে দেশ জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা সবাই দেখেছেন। অথচ, কয়েক কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন-জীবিকা সুরক্ষিত রাখার কোনও পরিকল্পনা বাজেটে নেওয়া হয়নি। শ্রমিকের পেশাগত রোগ, বিশেষত পাথর-খাদানে সিলিকোসিসে আক্রান্তদের কথাও বাজেটে অনুচ্চারিত।
লেখক একজন পরিবেশ ও সমাজকর্মী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy