উলুবেড়িয়ার খলিসানিতে মুম্বই রোডের ধারে চলছে চোলাই মদের ঠেক। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
‘ব্ল্যাক স্পট’ এখনও দুই গ্রাম— মদাই ও শাঁখাভাঙা।
একটা সময়ে হাওড়া জেলা জুড়ে প্রচুর চোলাই মদের ভাটি ছিল। কিন্তু মহিলাদের বিভিন্ন সংগঠন অভিযান চালিয়ে বেশিরভাগ ভাটি ভেঙে দিলেও এখনও বহাল তবিয়তে চোলাই ব্যবসা চলছে উলুবেড়িয়ার শাঁখাভাঙা এবং মদাই— এই দুই গ্রামে। এখানে মদ তৈরি কুটির শিল্পের পর্যায়ে পৌছেছে। ঘর ঘর তৈরি হচ্ছে। চলে যাচ্ছে জেলার নানা প্রান্তে।
এই হাওড়ারই মালিপাঁচঘড়ার গজানন বস্তিতে বিষমদে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যুর পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, মদাই ও শাঁখাভাঙার চোলাই কারবার কি বন্ধ হবে না?
এখনই যে তা হবে না, জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘মদাই ও শাঁখাভাঙার ভাটি-মালিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটা না হলে ভাটি বন্ধ করা যাবে না।’’
আবগারি দফতর জানিয়েছে, ওই দুই গ্রামে পুলিশকে নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এলাকাটি দূর্গম হওয়ায় সবসময় অভিযান সফল হয় না। উল্টে ভাটি-মালিকরা পুলিশ ও আবগারি দফতরের উপরে চড়াও হয়। অনেক সময়ে অভিযানে গিয়েও তাঁদের রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে আসতে হয় বলে স্বীকার করেছেন আবগারি কর্তারা।
চোলাইয়ের ব্যবসা শুধু ওই দুই গ্রামেই সীমাবদ্ধ নেই। এখান থেকে জ্যারিকেনে করে মদ চলে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। রাজাপুরের তুলসীবেড়িয়া, সুমদা বামুনপাড়া, খলিসানি কালীতলা, কুলগাছিয়া রেলস্টেশন চত্বরে রমরমিয়ে পাউচে করে বিক্রি হয় চোলাই। দিনের বেলায়, প্রকাশ্যেই। রেল পুলিশের দাবি, মদ কারবারিদের হটিয়ে দেওয়া হলেও তারা আবার এসে বসে।
ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশকে টাকা দিয়ে চোলাই বিক্রি চলছে অবাধে। পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘বিষয়টা দেখার কথা আবগারি দফতরের। আবগারি দফতর যখন অভিযান করে পুলিশ সঙ্গে থাকে।’’
একটা সময়ে তুলসীবেড়িয়ায় প্রচুর চোলাই মদের ভাটি ছিল। চোলাই খেয়ে বহু মানুষ মারা গিয়েছেন বলে এই গ্রামের বাসিন্দারা জানান। তারপরেই মহিলারা একজোট হয়ে ভাটির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। এখন এই গ্রামে ভাটি আর নেই। কিন্তু চোলাই বিক্রি বন্ধ হয়নি। যে সব মহিলা ভাটি তুলতে অভিযান চালিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম কল্যাণী পালুই বলেন, "আমরা ভাটি তুলে দিলে কী হবে! এলাকারই কিছু মানুষ জ্যারিকেনে করে বাইরে থেকে চোলাই এনে বিক্রি করছে। আমরা তাড়া করলে পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চলে গেলে ফিরে আসছে।’’
পুলিশ বা আবগারি দফতর যে একেবারে ঠুঁটো, এমন নয়। বহু জায়গায় অভিযান চলে। কারবারিরা ধরা পড়ে। চোলাই আটক করা হয়। কিন্তু তার পরেও কারবার বন্ধ হয় না। কারবারিরা ধরা পড়ার পরে জামিন পেয়ে গেল ফের এই ব্যবসায় নেমে পড়ে বলে আবগারি দফতরের হাওড়া সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফিসের এক কর্তা দাবি।
মদাই ও শাঁখাভাঙায় ভাটি বন্ধ হলে জেলায় এই কারবারে অনেকটাই লাগাম পরবে বলে মনে করছেন অনেকে। চোলাই মদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা তথা রাজাপুরের কামিনা গ্রামের বাসিন্দা মন্টু শী বলেন, ‘‘ওই দুই গ্রামে চোলাই বানানো বন্ধ করে দিলেই জ্যারিকেনে করে মদের জোগান বন্ধ হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy