রিষড়ায় গন্ডগোলের কারণে কোন্নগর স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে দূরপাল্লার ট্রেন। নিজস্ব চিত্র।
৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হুগলির রিষড়া স্টেশনে ট্রেনের ভিতর আটকে থাকলেন যাত্রীরা। কাটালেন আতঙ্কের প্রহর। স্টেশনের কাছে ৪ নম্বর রেল গেটে অশান্তির জেরে বন্ধ রইল হাওড়া-বর্ধমান শাখার আপ-ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল। রাত ১টারও পরে চালু হয় সেই পরিষেবা।
হাওড়া থেকে রাত সাড়ে ৯টার আপ ব্যান্ডেল লোকাল রিষড়া স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছিল ৯টা ৫১ মিনিট নাগাদ। সোমবার রাতে তার পর সওয়া ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় রিষড়ায় ওই ট্রেনে বসেই আতঙ্কের প্রহর কাটালেন যাত্রীরা। বন্ধ করে রাখতে হল ট্রেনের অধিকাংশ দরজা-জানলা। বাইরে থেকে তখন ভেসে আসছে ব্যাপক বোমা ও কাঁদানে শেল ফাটানোর আওয়াজ। তারই মধ্যে স্টেশনে ঘোষণা, ‘‘চার নম্বর রেল গেটের কাছে অশান্তির কারণে আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। ট্রেন চলাচল শুরুর আগে ঘোষণা করা হবে।’’ শেষমেশ রাত একটা নাগাদ ঘোষণা করা হয়, ট্রেন ছাড়বে। আতঙ্কিত যাত্রিবোঝাই ওই ট্রেন ছাড়ে ১টা ৮ মিনিটে। তার ঠিক ৩ মিনিট আগেই স্টেশন ছেড়ে বেরিয়েছে আপ হাওড়া-কাঠগোদাম বাঘ এক্সপ্রেস।
সোমবার রাতে অশান্তি শুরু হয় হুগলির রিষড়া স্টেশনের কাছে। চলে ব্যাপক বোমাবাজি। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। তারা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় বলে যাত্রীদের একাংশ জানিয়েছেন। আর এ সবের জেরে হাওড়া থেকে আপ এবং ডাউন— দুই লাইনেই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একের পর এক ট্রেন বাতিল হওয়ায় হাওড়া স্টেশনে শুরু হয় যাত্রী বিক্ষোভ। রিষড়ায় আটকে পড়া যাত্রীরা জানান, ট্রেনের দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখা হয়। স্টেশন চত্বরে ছিল হাতে গোণা কয়েক জন পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি কত ক্ষণে স্বাভাবিক হবে, তা স্পষ্ট ছিল না রেলের কাছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র সেই সময় বলেন, “বিক্ষোভকারীরা রিষড়ায় ৪ নম্বর রেল গেট বন্ধ করতে দিচ্ছেন না। রেল বহির্ভূত কোনও কারণে অশান্তি চলছে ওই এলাকায়। তার জেরেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ পুলিশ-প্রশাসনকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ট্রেনে আটকে থাকা যাত্রীদের অনেকেই স্টেশনে পানীয় জল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। এর পর রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়, প্ল্যাটফর্মের পিছনের দিকের সমস্ত কলে পানীয় জল পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন চত্বরে কোনও দোকান খোলা না থাকায় যাত্রীরা খাবারদাবার পাননি বলে অভিযোগ। ব্যান্ডেল লোকালে আটকে পড়া এক যাত্রী জানান, রিষড়া স্টেশনে এসে রাত ৯টা ৫১ মিনিট নাগাদ থমকে যায় তাঁদের ট্রেন। সেই সময় বাইরে একটানা প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘চার নম্বর রেল গেটের কাছে কোনও অশান্তি হচ্ছিল। আমরা প্ল্যাটফর্ম থেকে আওয়াজ পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল বোমা ফাটানো হচ্ছিল। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে বলেও কয়েক জন বলাবলি করছিলেন। তবে ঠিক কী হচ্ছিল, তা জানি না।’’
আতঙ্কে যাত্রীরা কেউই ট্রেনের বাইরে বেরোননি। যে দু’এক জন বেরিয়েছিলেন, তাঁরা জানান, স্টেশনে যাত্রী নিরাপত্তায় কয়েক জন পুলিশকর্মী থাকলেও তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে জানান, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’ ঠিক কী কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল, তা নিয়ে কিছু বলেননি অমিত।
রাত ১টার কিছু আগে রিষড়ায় এসে দাঁড়ায় আপ বাঘ এক্সপ্রেস। এর কিছু ক্ষণ পরেই রেল ঘোষণা করে, ‘‘যাত্রীদের ট্রেনে উঠে বসতে অনুরোধ করা হচ্ছে। এখনই সিগন্যাল দেওয়া হবে।’’ তার পর রাত ১টা ৫ মিনিটে ছেড়ে যায় বাঘ এক্সপ্রেস। এবং তার ৩ মিনিট পরেই ছাড়ে আপ ব্যান্ডেল লোকাল। পূর্ব রেলের মুখ্য জন সংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র সওয়া ১টা নাগাদ বলেন, “রাত ১টা পাঁচে রিষড়া স্টেশন থেকে আপ হাওড়া-কাঠগোদাম বাঘ এক্সপ্রেস ছেড়েছে। তার পর থেকেই লোকাল ট্রেনগুলি পাস করছে। ট্রেন পরিষেবা চালু হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy