আঘাত: এ ভাবেই ভাঙা হচ্ছিল হান্না-হাউস। —নিজস্ব চিত্র।
যন্ত্রের ধাক্কায় ভাঙছে জীর্ণ দেওয়াল, ছাদ। স্কুলের শিক্ষিকাদের একাংশ এবং সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষ রুখে দাঁড়ালেন। ততক্ষণে ভারত তথা এশিয়ায় মেয়েদের অন্যতম প্রাচীন স্কুলভবনের একাংশ ধুলিসাৎ। শ্রীরামপুর মিশন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে থাকা ‘হান্না হাউস’-এর শনিবার এই পরিণতিতে ক্ষুব্ধ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মহল। পুরনো আদলে ভবনটি সংস্কারের দাবি উঠেছে।
১৮০০ সালে শ্রীরামপুর-ত্রয়ী উইলিয়াম কেরি, জ্যোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড এই শহরে আসেন। তাঁরা শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী হন। হান্না মার্শম্যান ছিলেন জ্যোশুয়া মার্শম্যানের স্ত্রী। শ্রীরামপুর কলেজের দর্শনের শিক্ষক তথা ইতিহাস অনুসন্ধানকারী প্রভাকর ভট্টাচার্য জানান, ১৮০০ সালে দু’টি আবাসিক স্কুল করেন মার্শম্যান দম্পতি। পরে মেয়েদের শিক্ষাদানে ব্রতী হন হান্না। ১৮১৮ সালে তিনি শ্রীরামপুর মিশন গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এই ভবনে। পরবর্তী সময়ে নাম হয় ‘হান্না হাউস’। ঘটনাচক্রে ওই বছরই শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। পরে আরও অনেক স্কুল গড়েছিলেন হান্না।
‘হান্না হাউস’ জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। শনিবার পে-লোডার এনে ভাঙা শুরু হয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে, কারা এই সিদ্ধান্ত নিলেন, তা স্পষ্ট হয়নি। ওই জায়গায় প্রাথমিক স্কুলও চলে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি তথা স্থানীয় পুর-সদস্য রেখারানি শা’য়ের স্বামী তথা পাশের ওয়ার্ডের পুর-সদস্য রাজেশ শা’য়ের দাবি, ‘‘ভবনটি ভাঙার ব্যাপারে মৌখিক ভাবে সবাই সায় দিয়েছিলেন। ভবনের অবস্থা শোচনীয়। পিছনেই প্রাথমিক স্কুলের ক্লাসে ছেলেমেয়েরা যাতায়াত করতে পারে না। তাই, ভাঙার কথা হয়।’’ প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক অঞ্জন করের বক্তব্য, তিনি এসে দেখেন, ভাঙা চলছে। যা কিছু হয়েছে, পুর দফতরের মাধ্যমেই হয়েছে।
প্রভাকর বলেন, ‘‘ইতিহাস বিজড়িত এমন ভবন ভাঙা হলে, কষ্ট তো হবেই।’’ মিশন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা চান, ভবনটি সংস্কার হোক। তাঁদের অজ্ঞাতেই ভাঙা হচ্ছিল। জানতে পেরে প্রধান শিক্ষিকা সোনালি চক্রবর্তী স্কুলে আসেন। অন্য শিক্ষিকারাও রুখে দাঁড়ান। শ্রীরামপুরের পুর-পারিষদ সন্তোষ সিংহ, শ্রীরামপুর হেরিটেজ রেস্টোরেশন ইনিশিয়েটিভ (শ্রী)-এর সদস্য মোহিত রণদীপ আসেন। মোহিত এবং ‘শ্রী’-র সম্পাদক দেবাশিস মল্লিক বলেন, ‘‘প্রশাসনের উচিত ঐতিহাসিক গুরুত্বের এই
ভবন বাঁচানো।’’
সন্তোষের দাবি, কয়েক মাস আগে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষককে তিনি বলেছিলেন, ভবনটি যেন ভাঙা না পড়ে। উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভবনটি সংস্কারের দাবিতে হেরিটেজ কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy