সিপিএম প্রার্থীর বাড়ির চালে পড়ে থাকা বোমা খুঁজতে মইয়ে চড়লেন পুলিশকর্মী। —নিজস্ব চিত্র।
দেখে মনে হবে, পাড়ার ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ‘দস্যি’ ব্যাটারের মারা ছক্কায় হারানো বল খুঁজতে প্রতিবেশীর বাড়ির ছাদ উঠেছে সঙ্গীরা। কিন্তু না, এঁরা পুলিশ। এবং বল নয়, গৃহস্থের বাড়ি লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমা খুঁজছেন তাঁরা। খুঁজতে খুঁজতে কোনও পুলিশকর্মী বোমা পেলেন বারান্দায়, কেউ আবার ছাদে বোমা দেখে তা উদ্ধার করতে মই লাগিয়ে চালে উঠলেন। ঘটনাস্থল হুগলির চণ্ডীতলার ভগবতীপুরের কানাইডাঙা গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা সায়মা বেগম এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ২৩ নম্বর জেলা পরিষদের সিপিএম প্রার্থী ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটের পর থেকে বাড়িতে থাকাই দায় হয়েছে। শুক্রবার সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারেননি। মুহুর্মুহু বিস্ফোরকের শব্দে আতঙ্কে কেঁপেছেন। শিশুদের বুকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে রাত কাটিয়েছেন। সিপিএম প্রার্থীর আরও জানান, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমার পর বোমা ছুড়েছে। কোনওটা ফেটছে, কোনওটা না ফেটে বাড়ির চালেই পড়ে ছিল। শনিবার তেমনই সেই সব বোমা উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।
যদিও সিপিএম নেত্রীর অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে তৃণমূল। শাসকদলের নেতারা বলছেন, এমন কোনও কাজে তাঁদের কোনও কর্মীরা যুক্ত নন। অন্য দিকে, সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে বার বার হামলার জেরে এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল দিচ্ছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সিপিএম নেত্রী সায়মার অভিযোগ, তিনি সিপিএমের টিকিটে ভোটে দাঁড়ানো ইস্তক শাসকদলের অত্যাচার শুরু হয়েছে। ভোটের দিন আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি। ভোটের ফল প্রকাশের পর সেই হামলার মাত্রা আরও বেড়েছে। শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধর করেছেন। তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বাড়িতে ঢুকে লুটপাটও হয়েছে। ঘরে যৎসামান্য নগদ টাকা-পয়সা, গয়না— যা ছিল, সবই নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ভয়ে বাড়ি ছেডে়ছিলেন তিনি। দিন তিনেক বাইরে থাকার পর শুক্রবারই প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়ি ফেরেন। কী কারণে তিনি ঘরছাড়া, তা নিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেন। কিন্তু রাত হতেই আতঙ্কের শুরু। আবার বাড়িতে বোমা ছুড়েছে দুষ্কৃতীরা। সায়মার কথায়, ‘‘সারা রাত ঘুমোইনি। বাচ্চাদের বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাত কাটিয়েছি। রাতভর যেন আমার বাড়িতে ভূমিকম্প হচ্ছে। বার বার বোমা ফাটার আওয়াজ আসছে। বাড়িঘর সব কাঁপছে।’’
সায়মার অভিযোগ পেয়ে শনিবার সায়মার বাড়ি আসে পুলিশ। তার পর বোমা উদ্ধার করতে মই লেগে সিপিএম প্রার্থীর বাড়ির চালেও ওঠেন পুলিশকর্মীরা। সায়মার আবেদন, তিনি যাতে পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করে দিক প্রশাসন। আবার নিজেই বলছেন, ‘‘আবেদন করেছি বটে। তবে প্রশাসনের উপর আর ভরসা নেই। এখন প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছি। বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত।’’
যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, মিথ্যা অভিযোগ করছেন সিপিএম নেত্রী। আর এমনটা যদি হয়েও থাকে, তাতে তৃণমূলের কেউ যুক্ত নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy