আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মিছিলের সমালোচনা করলেন কাঞ্চন মল্লিক। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আরজি কর-কাণ্ডে বিচারের দাবিতে পথে নামছে নাগরিক সমাজ। রবিবারও একাধিক মিছিল হয়েছে কলকাতার বিভিন্ন রাজপথে। একটি মিছিলে ছিলেন টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। তখনই ওই আন্দোলন, মিছিলের ‘প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। শুধু তাই নয়, আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে যে চিকিৎসকেরা বিক্ষোভ করছেন, কর্মবিরতি পালন করছেন, তাঁদের উদ্দেশে কাঞ্চনের প্রশ্ন, ‘বেতন নেবেন তো?’ শাসকদলের বিরোধিতা করে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের বিচার চাইছেন যে সরকারি চাকুরেরা, তাঁরা পুজোর বোনাস গ্রহণ করবেন কি না, সেই প্রশ্নও তুললেন উত্তরপাড়ার তারকা-বিধায়ক। এ নিয়ে কাঞ্চনকে সরাসরি সমর্থন বা বিরোধিতা করেনি তাঁর দল। প্রতিক্রিয়ার জন্য বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতাকে ফোন করা হয়েছিল। তাঁদের সবারই প্রায় একই মত— ‘‘মন্তব্য করেছেন যিনি, ব্যাখ্যাও দেবেন তিনি।’’ স্বাভাবিক ভাবে কাঞ্চনের মন্তব্যের সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিজেপি।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবার কোন্নগরে মহিলা তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে আসেন বিধায়ক এবং অভিনেতা কাঞ্চন। সংশ্লিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁর দলের দাবি মতো কাঞ্চনও দাবি করেছেন দোষীর মৃত্যুদণ্ডের। তিনি বলেন, ‘‘এটা জঘন্যতম অপরাধ। দোষীর এমন শাস্তি হোক যেন এমন অপরাধ করতে কেউ দশ বার ভাবে।’’ কিন্তু বিচারের দাবিতে টলিপাড়া থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে কর্মসূচি নিয়েছে, তার সমালোচনা করেছেন তৃণমূল বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘মিছিলের নাম করে যে অশান্তি, বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে, এগুলোর কি দরকার আছে? এগুলো করলে কি দোষীর শাস্তি হয়ে যাবে? ‘নবান্ন চলো’ অভিযান হলে কি দোষীর শাস্তি হবে?’’ কাঞ্চন নিজেই সে জবাব দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এতে মূল ইস্যুর অভিমুখ বদলে যাবে। কেন সিজিও কমপ্লেক্সের (সিবিআই দফতর) অভিযান হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ওই বিধায়ক। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন তিনি। কাঞ্চনের কথায়, ‘‘ডাক্তারেরা কর্মবিরতি করছেন। সবাই বলেন, ‘ডাক্তার মানে ভগবান’। আপনারা (চিকিৎসকেরা) আন্দোলন করুন। কিন্তু সাধারণ রোগীরা কি অপরাধ করেছেন? এমন কাজ করা উচিত নয়, যাতে ডাক্তারকে ভগবান বলতে গেলে এর পর দশ বার ভাবতে হয়।’’ তৃণমূল বিধায়ক আরও বলেছেন, ‘‘আমাদের গণতান্ত্রিক দেশ। প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতামত আছে। কিন্তু অনেকেই শুনছি দুর্গাপুজোর অনুদান নেবেন না বলছেন। ভাল কথা। (কিন্তু) যাঁরা কর্মবিরতি করছেন বা শাসকদলের বিরুদ্ধে (কথা) বলছেন, তারা সরকারি বেতনটা নিচ্ছেন তো? নাকি নিচ্ছেন না? পুজোর বোনাসটা নেবেন তো? আমার প্রশ্ন এগুলো।’’
আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে উত্তরপাড়ার তিনটি ক্লাব সরকারি ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এ বার পুজোর সরকারি অনুদান নেবে না। ‘দুর্গার ভান্ডার’-এর ৮৫ হাজার টাকা প্রত্যাখানের কথা ঘোষণা করেছে বেশ কয়েকটি ক্লাব। কাঞ্চন ওই বিষয়টি তুলে এনে টলিপাড়ার যে শিল্পীরা মিছিল করছেন, তাঁদেরও খোঁচা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শিল্পী যাঁরা আছেন, যাঁরা সরকারি পুরস্কার ইত্যাদি নিয়েছিলেন, তারা সে সব ফেরত দেবেন তো? বলুন, ফেরত দিয়ে দিচ্ছি।’’
কাঞ্চনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা সজল ঘোষ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘উনি বিয়ে-টিয়ে নিয়েই থাকুন না। এ সব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কী বলছেন! মানুষের আবেগ বোঝেন না উনি।’’ বিজেপি কাউন্সিলরের সংযোজন, ‘‘সরকারি অনুদান বা পুরস্কার পেয়েছেন বলে কি বাড়ির মেয়েকে ধর্ষিতা হতে হবে? অপরাধ হলে প্রতিবাদ করা যাবে না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy