Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Flood

২ লক্ষ ৪১ হাজার কিউসেক জল ছাড়ল ডিভিসি, উদয়নারায়ণপুর আর আমতা-২ ভাসার আশঙ্কা

ন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দিন বিকেলে মন্ত্রী পুলক রায়ের তত্ত্বাবধানে জরুরি পৃথক বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসন, গ্রামীণ জেলা পুলিশ এবং দু’টি ব্লক প্রশাসনের কর্তারা।

নৌকোয় যাতায়াত ভাটোরায়। ছবি: সুব্রত জানা

নৌকোয় যাতায়াত ভাটোরায়। ছবি: সুব্রত জানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৬
Share: Save:

সোমবারের থেকেও পরিস্থিতি খারাপ হল মঙ্গলবার। রাত পর্যন্ত ডিভিসি দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ২ লক্ষ ৪১ হাজার কিউসেক জল ছাড়তে থাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায়। আজ, বুধবার সেই জল দামোদর বাহিত হয়ে এই দু’টি ব্লকে আসার কথা।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দিন বিকেলে মন্ত্রী পুলক রায়ের তত্ত্বাবধানে জরুরি পৃথক বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসন, গ্রামীণ জেলা পুলিশ এবং দু’টি ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। ছিলেন উদয়নারায়ণপুর এবং আমতার দুই বিধায়ক, সমীর পাঁজা ও সুকান্ত পাল। দু’টি বৈঠকেই ঠিক হয়, বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় যথেষ্ট ত্রাণশিবির খোলা হবে। এ ছাড়াও, মজুত করা হচ্ছে শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য, পানীয় জলের পাউচ, অতি প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র এবং গবাদি পশুর খাদ্য।

পুলক বলেন, ‘‘ডিভিসি যে হারে জল ছাড়ছে, তাতে বন্যা হওয়া আটকানো যাবে না। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সব রকমের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।’’ দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য রাখা হচ্ছে স্পিড বোট এবং দেশি নৌকো। রাজ্য ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলও আসছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।

উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকের বেশির ভাগ এলাকা পড়ে দামোদরের পশ্চিম দিকে। এটি ‘স্পিল’ এলাকা হওয়ায় এ দিকে দামোদরে সেচ দফতর বাঁধ দিতে পারে না। সাবেক জমিদারি বাঁধগুলিকেই বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু সেই বাঁধের উচ্চতা কম। সে কারণে ডিভিসি দেড় লক্ষ কিউসেকের উপরে জল ছাড়লেই এই দু’টি ব্লকে বন্যার আশঙ্কা থাকছেই। নিচু বাঁধ থেকে জল উপছে এলাকায় ঢুকে পড়ে।

সেচ দফতরের এক বাস্তুকার বলেন, ‘‘বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ হলেও ডিভিসি মাত্রাতিরিক্ত জল ছাড়লে কিছুই করার থাকবে না। আগে ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়লেই বন্যা হয়ে যেত। বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ হওয়ায় দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়লেও কোনও বিপদ হবে না। কিন্তু তার বেশি জল ছাড়লে কিছু করার থাকবে না।’’ এই দু’টি ব্লকে ২০২১ সালে শেষ বার বন্যা হয়েছিল। গত বছরেও ডিভিসি জল ছাড়ে। কিন্তু তার পরিমাণ দেড় লক্ষ কিউসেকের মধ্যে ছিল। ফলে বন্যা হয়নি।

উদয়নারায়ণপুরের ১১টির মধ্যে ৯টি পঞ্চায়েত বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন। প্রায় ৫০টি ত্রাণ শিবির খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। অন্য দিকে, আমতা ২ ব্লকের ১৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বেশিরভাগই বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। এখানেও পর্যাপ্ত ত্রাণ শিবির খোলা হচ্ছে বলে কর্তারা জানিয়েছেন।

এই ব্লকের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা— এই দু’টি পঞ্চায়েত ইতিমধ্যেই রূপনারায়ণ এবং মুণ্ডেশ্বরীর জলে প্লাবিত হয়েছে। ভাটোরার প্রধান অশোক গায়েন বলেন, ‘‘রাস্তাঘাট, পুকুর, কৃষি জমি, এমনকী বাড়ির একতলা কোমরসমান জলের নীচে।’’ ডিভিসির ছাড়া জল এলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে জানান অশোক।

আমতার বিধায়ক সুকান্ত পালের কথায়, ‘‘ওই দু’টি পঞ্চায়েত এলাকায় ত্রাণ ও খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরিয়ে আনা হচ্ছে প্রসূতিদের।’’ পুলক বলেন, ‘‘ডিভিসি এক লপ্তে এত জল ছাড়ার জন্যই বিপত্তি ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পরিস্থিতির মোকাবিলায় যা যা করণীয়, তা চূড়ান্ত করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

flood udaynarayanpur Amta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE