রথযাত্রার দিন থেকেই যাত্রার বুকিং শুরু। গোঘাটের কামারপুকুর চটিতে। নিজস্ব চিত্র
অতিমারি পর্বে কিছুই হয়নি। গত বছর রথের দিনই ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ফলে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুগামী ‘নায়েক’রা ব্যস্ত ছিলেন। গোঘাটের কামারপুকুরের যাত্রার দলগুলি ৪-৫টির বেশি বায়না পায়নি। বছরভরই বাজার মন্দা গিয়েছে। এ বার রথের দিন রবিবার সেখানকার মোট ১৭টি দল গড়ে ১০-১২টি করে বায়না পেল। এ ছাড়া প্রত্যেক দলের ‘পকেট বায়না’ তথা বাঁধা বায়না আছে ৫০ থেকে ৭০টি করে। সব মিলিয়ে গ্রামীণ যাত্রাশিল্পে আশার আলো দেখছেন অপেরা মালিক ও কলাকুশলীরা।
প্রতি বছর রথযাত্রার দিন থেকেই যাত্রার দলগুলি বায়না নেওয়া শুরু করে। যাঁরা বিভিন্ন গ্রামে যাত্রার আয়োজকদের সঙ্গে দলগুলির যোগাযোগ করিয়ে দেন, তাঁরাই ‘নায়েক’। আয়োজকদের হয়ে অগ্রিম টাকা তাঁরাই দিয়ে দেন। এ দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কামারপুকুর চটিতে বিভিন্ন ‘অপেরা’র অস্থায়ী অফিসগুলিতে যাত্রাপালার বায়না করতে আসেন ‘নায়েক’রা।
কামারপুকুরের যাত্রাশিল্প শতাব্দীপ্রাচীন। কয়েক দশক আগেও ৬০-৭০টি দল ছিল। এখন কমতে কমতে ১৭টিতে ঠেকেছে। দলপিছু বিভিন্ন বয়সের ২০ থেকে ২৫ জন কলাকুশলী রয়েছে। অপেরাগুলির পালাপিছু দর ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শিল্পীরা পালাপিছু ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন।
প্রায় ৪৯ বছর যাত্রার সঙ্গে যুক্ত ‘গণেশ অপেরা’র মালিক এবং অভিনেতা সব্যসাচী মৌলিককের অভিযোগ, “করোনা পর্ব থেকে চলা বিপর্যয় ক্রমশ কাটছে। এ বার বায়নার সূচনার দিনই ভাল সাড়া মিলেছে। এ দিনের ৭টি বায়না ও ‘পকেট বায়না’ মিলিয়ে আমাদের ৭৭ রাতের বায়না মিলল।’’ একই রকম ভাবে এ দিন ‘রায় অপেরা’র মালিক এবং অভিনেতা জয়ন্ত পাইন ১১টি পালা, ‘শিল্পতীর্থ অপেরা’র মালিক ও অভিনেতা অভিজিৎ রায় ১২টি পালার বায়না পেয়েছেন বলে জানান।
বিভিন্ন অপেরার মালিক ও কলাকুশলীদের বক্তব্য, ২০২০ সাল থেকে দু’বছর করোনার জেরে পালা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রাশিল্পীকেই দিনমজুরি বা আনাজ বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়েছে। গত বছর কিছু বায়না মিললেও পঞ্চায়েত ভোটের কারণে বাজার মন্দা গিয়েছে। এ বার প্রথম দিনের ‘নায়েক’দের ভিড় এবং বায়নার গতি দেখে সারা বছরে অন্তত ১৯০টি থেকে ২০০টি পর্যন্ত পালা করা যাবে বলে সকলের আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy