ফুরফুরায় রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ। — নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড বাধল হুগলির জাঙ্গিপাড়ার ফুরফুরায়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, বেলা ১২টার পর ফুরফুরা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হবে। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও পঞ্চায়েত অফিসের তালা খোলেনি। তৃণমূলের অভিযোগ, পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় আইএসএফ এবং সিপিএম। উল্টো পক্ষের দাবি, গোটা বিষয়টিই আদালতের বিচারাধীন। এই সময়ে বোর্ড গঠন সম্ভব নয়। পরে পুলিশ গিয়ে তালা খোলে। পুলিশের সঙ্গে বেধে যায় খণ্ডযুদ্ধ। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। এর মধ্যেই বোর্ড গঠন করা হয় পঞ্চায়েতের। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আটক করা হয়েছে কয়েক জনকে।
ফুরফুরা পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ফুরফুরা। সেখানকার পঞ্চায়েত অফিসের সামনে যুযুধান দু’পক্ষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অভিযোগ ওঠে বোমাবাজিরও। গন্ডগোলের আশঙ্কায় বন্ধ হয়ে যায় আশপাশের দোকানপাট। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পঞ্চায়েতের তালা খুলে দেওয়া হয়। তল্লাশি চালিয়ে আশপাশ থেকে বেশ কয়েকটি বোমাও উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠে। ইটের ঘায়ে জখম হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাল্টু হালদার-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে লাঠিচার্জ করা হয়। দফায় দফায় ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি আয়ত্তে আসেনি। রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন আইএসএফ কর্মী-সমর্থকরা।
ফুরফুরার পিরজাদা কাশেম সিদ্দিকি দাবি করেন, ‘‘ফুরফুরা পঞ্চায়েত জিতেছে আইএসএফ। তৃণমূল জোর করে দাবি করছে, ওরা জিতেছে। এ নিয়ে আমরা আদালতে গিয়েছি। সেখানে বিষয়টি বিচারাধীন। এই সময়ে ওরা কী করে বোর্ড গঠন করবে? আর ফুরফুরার লোকেরা তা করতে দেবে কেন? ফুরফুরায় গুন্ডামি মস্তানি করত প্রধান শামিম আহমেদ। ও-ই বোমাবাজি করছে।’’ গোটা বিষয়টি নিয়ে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি অভিযোগ করেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান তিনি। পুলিশকেও কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। তাঁর আরও অভিযোগ, ইট ছুড়ে তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এই বোর্ড গঠন অনৈতিক। আমরা আইনের মাধ্যমে বুঝে নেব।’’ এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।
তবে আইএসএফের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। ফুরফুরা পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান শামিম আহমেদ বলেন, ‘‘গতকাল রাত থেকে বোমাবাজি করেছে আইএসএফ। ওরা পঞ্চায়েতে একটা তালা ঝুলিয়েছে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের দিনে। এখানে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। গণনা শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বোর্ড গঠনও শান্তিপূর্ণ হবে। শান্ত ফুরফুরাকে অশান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। ওরা আদালতের এমন কোনও নির্দেশ দেখাতে পারেনি, যেখানে বলা আছে, বোর্ড গঠন করা যাবে না।’’
ফুরফুরা পঞ্চায়েতে মোট ২৯টি আসন। গণনার দিন অশান্তি হয় জাঙ্গিপাড়ায়। আইএসএফ এবং সিপিএমের দাবি, তারা ২২টি আসনে এগিয়েছিল। ভোটগণনা করতে না দিয়ে জোর করে তাদের বার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পর নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখা যায় তৃণমূল ওই পঞ্চায়েতে পেয়েছে মোট ২৪টি আসন। বৃহস্পতিবার অশান্তির মধ্যেই ফুরফুরা পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। প্রধান হন রাজিয়া সুলতানা এবং উপপ্রধান হন মৃগাঙ্কমোহন মাল। ফুরফুরার আর এক পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির অভিযোগ, চক্রান্ত করে শান্ত ফুরফুরায় অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বহিরাগতরা এসে গন্ডগোল পাকিয়েছে বলে মত তাঁর। তৃণমূলের কেউ এই গন্ডগোলে জড়িত নয় বলে দাবি ত্বহার।
ফুরফুরার ঘটনা নিয়ে হুগলি গ্রামীণের পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে আইএসএফের কর্মী-সমর্থকরা ইট ছুড়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy