—প্রতীকী চিত্র।
বছর বারোর পড়শি বালিকাকে খুন করে লাঙল দেওয়া খেতে দেহ মাটিচাপা দিয়ে অম্লান বদনে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল বছর বাইশের যুবক! রবিবার রাতে গ্রামীণ হাওড়ায় বালিকা-হত্যার তদন্তে এমনই দাবি করেছে পুলিশ। ওই যুবককে পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে। তদন্তকারীরা আরও জানান গোটা গ্রাম যখন নিখোঁজ মেয়েটিকে খুঁজছে, ওই যুবক বাড়িতে শুয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে পাড়ায় বিপত্তারিণী পুজোর ঘট বিসর্জন দিয়ে ফিরে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়েও পড়ে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অভিযুক্তের পরিবারের লোকেরা ‘মেয়েটিকে ভূতে নিয়ে গিয়েছে’, বলে পাড়া-পড়শিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। যুবকটি গ্রেফতার হতেই তাঁরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মঙ্গলবার রাতে ওই বাড়ির একাংশে ভাঙচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়। বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী রবিবার সন্ধ্যায় গ্রামেই বিপত্তারিণী পুজোর ভাসান দেখতে গিয়েছিল। রাত ১০টার পরেও না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। পুজোর মাইকে ঘোষণা করা হয়। এলাকাবাসীর দাবি, অভিযুক্তের বাড়ির লোকেরাও খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। এক সময় তাঁরা মেয়েটির আত্মীয়দের বলেন, তাঁরা ওঝার কাছে গিয়েছিলেন। ওঝা বলেছেন, মেয়েটিকে ভূতে ধরে গাছে লুকিয়ে রেখেছে। তিন দিন পরে ফিরবে। সেই শুনে সকলে বিভিন্ন গাছেও খোঁজাখুঁজি করেন। এ দিকে, খোঁজাখুঁজিতে ওই যুবককে না দেখে কয়েক জন তার বাড়িতে যান। তার মা তাঁদের জানান, ছেলের মাথাযন্ত্রণা করছে। শুয়ে আছে।
এক মহিলা বলেন, ‘‘ওই যুবক বিভিন্ন সময় নারীঘটিত ঘটনা ঘটিয়েছিল। তাই ওকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। শুয়ে থাকার কথায় সন্দেহ বাড়ে।’’ পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ করেন বালিকার বাবা। তাঁদের সন্দেহ শুনে ওই যুবককে আটক করা হয়। সে তখন গ্রামেই আড্ডা দিচ্ছিল। জেরায় খুনের কথা স্বীকার করে। দেহ উদ্ধার হয়। অপহরণ, খুন ও প্রমাণ লোপের ধারায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জেরায় ধৃত কার্যত ভাবলেশহীন ভাবেই খুনের ঘটনা বর্ণনা করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই যুবক কবুল করেছে, ধর্ষণের অভিপ্রায়ে মেয়েটির মুখ চেপে সে একটি নিকাশি খাল টপকে ঝোপে নিয়ে যায়। মেয়েটি চিৎকার করায় গলা টিপে মারে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘চাকরি জীবনে এইটুকু মেয়েকে এমন নৃশংস হত্যা দেখিনি। গলা টেপার পরে মেয়েটি নিস্তেজ হয়ে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত করতে কাদামাটির মধ্যে মুখ ঠুসে ধরেছিল।’’ নিহতের বাবা বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, মেয়েকে ধর্ষণও করেছিল। ধর্ষণের ধারাও দেওয়া উচিত ছিল।’’ তদন্তকারীদের বক্তব্য, নিহতের দেহে আপাতদৃষ্টিতে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমন কোনও প্রমাণ মিললে সেই মোতাবেক ধারা যোগ করা হবে।
বুধবার গ্রামে দেখা গেল, জায়গায় জায়গায় মহিলাদের জটলা। অনেক বাড়িতে দু’দিন হাঁড়ি চাপেনি। পাড়া-পড়শিদের অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবক বরাবরই বখাটে। হাওড়ায় লোহার কারখানায় কাজ করলেও নিয়মিত যেত না। দিনভর পাড়ার মাচায় বসে নানা রকম নেশা করত। মহিলাদের উত্যক্ত করত। ছোট-বড় কাউকে ছাড়ত না। একাধিক বার মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে পাড়ায় সালিশি হয়েছে। বাবা-মা হাতেপায়ে ধরে মিটিয়েছেন। এক মহিলার কথায়, ‘‘বাবা-মা ছোট থেকে শাসন করলে এমন হত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy