চাকরিতে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছিল। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে চাকরি হারিয়ে জীবনে নেমে এল দুর্দশা। অর্থনৈতিক ভাবে তো বটেই, সামাজিক ভাবেও আঘাত নেমে এসেছে বলে ওঁদের আক্ষেপ।
বিয়ের জন্য বছর খানেক আগে ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন হুগলির বলাগড় ব্লকের সরগড়িয়া আদিবাসী হাই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী দীপক মালো।
তিনি জানান, গত বছর ২২ এপ্রিল কলকাতা হাই কোর্টে চাকরি
বাতিলের পরেই বিয়ে ভেস্তে গিয়েছিল। আশা ছিল, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে চাকরি থাকবে। কিন্তু তা না হওয়ায় এ বার ঋণ শোধ করা নিয়ে চিন্তায় ডুমুরদহের টাকিপাড়ার বাসিন্দা ওই যুবক।
আত্মীয়েরা জানান, আগ ডুমুরদহ নিত্যানন্দপুর ১ পঞ্চায়েতের গ্রামসম্পদ কর্মী (ভিলেজ রিসোর্স পার্সন বা ভিআরপি) ছিলেন দীপক। ২০১৮ সালের এপ্রিলে স্কুলে যোগ দেন। তাঁর এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘ঋণ নেওয়া টাকা বিয়ের প্রস্তুতির কাজে খরচ হয়ে গেল। বিয়েটাও হল না। চাকরিটাও গেল। এখন ঋণ শোধ হবে কী করে!’’ দীপকের কথায়, ‘‘যোগ্য হয়েও অযোগ্যদের মতো ব্যবহার মেনে নিতে পারছি না। এ রকম রায় আশা করিনি। আমি আশাহত।’’
দীপকের বাবা ষাটোর্ধ্ব ত্রিনাথ মালো অসুস্থ। তিনি জানান, মেজো ছেলে অন্যত্র থাকেন। বড় ছেলে দিনমজুরের কাজ করলেও সংসারের ৯০ শতাংশ খরচ ছোট ছেলে দীপকই চালাতেন। ত্রিনাথ বলেন, ‘‘আমার বিবাহিত মেয়ে নাতিকে নিয়ে গত ১০ বছর ধরে এখানেই থাকে। নাতি দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ওদের দু’জনের দায়িত্বও ছোট ছেলের কাঁধে। এ বার কী হবে!’’ শুক্রবার দীপককে সমবেদনা জানাতে যান হুগলি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির শিক্ষক সেলের আহ্বায়ক তথা কামারপাড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ দাস। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষাক্ষেত্রে কালো দিন নেমে এসেছে। এই সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশে দাঁড়াব।’’
চাকরি হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানালেন পান্ডুয়া ব্লকের বিভিন্ন স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁদের মধ্যে এক শিক্ষক জানান, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছেন। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান, বয়স্ক বাবা-মা এবং বিবাহযোগ্য বোন রয়েছেন। রোজগেরে ছিলেন তিনি একা। এ বার কী করে সংসার চালাবেন, বোনের বিয়ে কী ভাবে দেবেন আর কী ভাবেই বা ব্যাঙ্কের ঋণ শুধবেন, সেই অঙ্ক মেলাতে পারছেন না বাংলার শিক্ষক।
মগড়ার বাগাটির একটি স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘অনেক বছর পড়াশোনা না করে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার প্রস্তুতি নেব কী ভাবে? খুব সমস্যায় পড়েছি। এত দিন সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছি। এখন সমাজে মুখই বা দেখাব কী করে!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)