মনোরঞ্জন ব্যাপারি এবং রুনা খাতুন। —ফাইল চিত্র।
বলাগড়ে গঙ্গায় জেগে ওঠা চরের মাটি ও বালি কাটার চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রশ্নে সাধারণ মানুষ বলেন, ‘বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো’।
কুন্তীঘাট থেকে গুপ্তিপাড়া এবং লাগোয়া পূর্ব বর্ধমানের কালনা ব্লক পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় সবুজ দ্বীপ ছাড়াও ছোট-বড় অন্তত ১৫টি চর রয়েছে। কালনা-২, গুপ্তিপাড়া ১ ও ২, চরকৃষ্ণবাটি, সোমরা ১ ও ২, শ্রীপুর-বলাগড়, জিরাট, সিজা কামালপুর, ডুমুরদহ ১ ও ২ মিলিয়ে ১০টি পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে তা বিস্তৃত। বেআইনি মাটি ও বালি কাটা নিয়ে চর্চার মধ্যেই গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের সূর্যমন্দির এলাকায় ওই কাজ যথারীতি চলছে বলে অভিযোগ। যে অভিযোগ সোমরা-২ পঞ্চায়েতের সবুজদ্বীপ সংলগ্ন সুখরিয়ার চরেও। রাতের অন্ধকারে ভুটভুটি নিয়ে ‘অপারেশন’ চলে বলে অভিযোগ। জিরাটের খয়রামারিতেও এই অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ বা বিএলএলআরও দফতর কিছু ব্যবস্থা নেয় না?
প্রশাসনের আধিকারিকেরা তা মানছেন না। প্রশাসনের খবর, গত এক বছরে বিএলআরও দফতর এবং পুলিশের তরফে অন্তত ৩০টি নির্দিষ্ট অভিযোগ হয়েছে বলাগড় থানায়। স্থানীয়দের দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বালি ও মাটি কাটার কাজে যুক্ত মুর্শিদাবাদ, মালদহের শ্রমিক এবং স্থানীয় মজুরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ধরপাকড় হয়। জামিন পেয়ে ফের একই কাজে লেগে পড়েন তাঁরা। দুষ্টচক্রের মাথারা আড়ালেই থেকে যায়।
কী কাজে লাগে গঙ্গার মাটি, বালি?
মগরা, বলাগড়, কালনা-২ ব্লক মিলিয়ে প্রায় চল্লিশটি ইটভাটা রয়েছে। ইট-বালি তার অনেকগুলিতে যায় বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। দুষ্টচক্রের মাথাদেরও অনেকের ইটভাটা রয়েছে বলে খবর। এক ভাটাকর্মীর বক্তব্য, ‘‘কৃষিজমির মাটিতে ইট ভাল হয় না। ইট উপযুক্ত করতে দীর্ঘ দিন ফেলেও রাখতে হয়। গঙ্গার মাটির ইটে কোনও সমস্যা নেই। ইটভাটায় মাটির জোগানের জন্যই গঙ্গার চরে কোপ পড়ে।’’ রাজস্ব ফাঁকি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলকে ‘খুশি করে’ই কাজ চলে বলে একগাল হেসে বললেন তিনি।
হুগলির ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘গঙ্গা থেকে বেআইনি মাটি ও বালি কাটার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরও করা হয়। সমস্যা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানাতে চান না। স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ করতে হয় আমাদের।’’ হুগলি পুলিশ জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। কোথাও কোনও বিধিভঙ্গ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনটা আইনি, কোথায় বেআইনি, নথিপত্র দেখে তা যাচাই করাও জরুরি।’’ অনেকেই জানান, ভয়ে তাঁরা টু-শব্দটি করেন না।
মাটি ও বালি তোলার কাজে যুক্ত লোকজনের একাংশের যুক্তি, এই কাজে অনেকের রুজি-রুটি জড়িত। মাটি বা বালি কাটার শ্রমিক, ডাম্পার বা ট্রাক্টরের মালিক ও চালকরা এই কাজের উপরে নির্ভরশীল। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে বর্ষার আগে পর্যন্ত এই কাজ চলে। কাজে আঘাত এলে অনেকেরই সমস্যা হবে। তবে অনেকেই চান, কারবার চলুক বৈধ ভাবে। যেমন-তেমন ভাবে মাটি কাটলে গঙ্গার গতিপথের জন্যও তা ভাল হবে না। তৃণমূলের একাংশের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই নদিয়ার দিক থেকে দুষ্কৃতীরা ভুটভুটি এনে এ পাড় থেকে মাটি কাটে। ভোরের আলো ফোটার আগে তারা ফিরে যায়। তাদের ধরতে পুলিশ বিশেষ গা ঘামায় না বলেও অভিযোগ আছে নানা মহলে।
(তথ্য সহায়তা: বিশ্বজিৎ মণ্ডল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy