Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Air pollution

কৃষিজমিতে পুড়ছে নাড়া, ছড়াচ্ছে দূষণ, সেই চেনা ছবি বদলাতে হরিপালে উদ্যোগী কৃষি দফতর

সচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি পোড়ানোর পরিবর্তে খড়বিচালিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে জৈব সারে পরিণত করার জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে হরিপাল ব্লক কৃষি দফতর।

কৃষিজমিতে পুড়ছে নাড়া।

কৃষিজমিতে পুড়ছে নাড়া। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হুগলি শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ ২৩:৩৫
Share: Save:

শুধু দিল্লি নয়, কৃষিজমিতে খড়বিচালি পোড়ানোর কারণে দূষণ ছড়াচ্ছে বাংলার বিভিন্ন জেলাতেও। যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটার পরে জমিতে পড়ে থাকা খড়ের অবশিষ্টাংশ (স্টাবল্, স্থানীয় ভাষায় যাকে ‘নাড়া’ বলা হয়) পুড়িয়ে দেওয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য। এই পরিস্থিতিতে খড় পোড়ানোর ক্ষতিকর দিকটি কৃষকদের সামনে তুলে ধরতে সক্রিয় হল হুগলি জেলা কৃষি দফতর। কয়েকটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সহায়তায় জেলার হরিপাল ব্লকে শুরু হয়েছে সচেতনতা প্রচার এবং খড়ের অবশিষ্ট অংশকে জৈবসারে পরিণত করার বিকল্প পদ্ধতির হাতেকলমে প্রশিক্ষণ।

হরিপাল ব্লক কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা শর্মিষ্ঠা রায় জানিয়েছেন, ‘ম্যানেজমেন্ট অব ক্রপ রেসিডিউ’ কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি। এ বারই প্রথম কেন্দ্রের নয়া ‘আতমা’ প্রকল্পকে এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছরই আমনের ফসল তোলার পরে আলু চাষের তাড়া থাকে কৃষকদের। সে কারণে তাঁরা দ্রুত মাঠ সাফ করতে চান। ফলে স্টাবল্ পুড়য়ে ফেলেন। কিন্তু এর ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জমির উর্বরতা শক্তিও হ্রাস পায়।’’ শর্মিষ্ঠা জানান, নাড়া পোড়ানোর তাপে জমির প্রায় ১০ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও আনুবীক্ষণিক প্রাণীর মৃত্যু হয়। তার মধ্যে থাকে উপকারী জীবাণুরা। জৈব এমনকি, অজৈব সারকে উদ্ভিদের ‘গ্রহণযোগ্য’ করে তোলার জন্য যাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।

কৃষিজমিতে নাড়া পোড়ানোর ফলে ছড়াচ্ছে দূষণ ।

কৃষিজমিতে নাড়া পোড়ানোর ফলে ছড়াচ্ছে দূষণ । নিজস্ব চিত্র।

শর্মিষ্ঠা জানিয়েছেন, পোড়ানোর পরিবর্তে খড়বিচালিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে জৈব সারে পরিণত করার জন্য কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের আইআরআই ক্যাপসুল চালু করা হয়েছে। কিন্তু তার জোগান অপ্রতুল। তা ছাড়া, আইআরআই ক্যাপসুল পেতে গেলে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে এ বছর ধান কাটার আগেই একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে হরিপাল ব্লক-সহ কৃষি দফতর। পরিবেশমুখী কৃষি সহায়তাকারী সংস্থা উলফিয়া বায়োটেক এবং কৃষি দফতরের আতমা কমিটির যৌথ উদ্দ্যোগে কৃষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে হরিপাল ব্লকের নালিকুলে। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে কোন্নগর যুক্তিমন, হাউল (হিউম্যান অবজারভেশন ওয়াইল্ডলাইফ লিগ)-এর মতো সংগঠন এবং স্থানীয় পরিবেশকর্মী কল্যাণময় দাস ও তাঁর সহযোগীদের। ব্লক কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা জানিয়েছেন আগামী দু’মাস ধরে ধাপে ধাপে চলবে এই প্রশিক্ষণ।

কল্যাণময় বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে ২৫ জন কৃষককে দেখানো হচ্ছে, ধানের অবশিষ্টাংশ পোড়ালে কী কী ধরনের বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মিশছে। তার ফলে আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এরই সঙ্গে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ব্যবহার করে দেখানো হচ্ছে নাড়া জমিতে জ্বালিয়ে দিলে উপকারী ব্যাকটিরিয়ার পাশাপাশি টিকটিকি, গিরগিটি, সাপ, বিভিন্ন পাখির শিশু পোকামাকড়, কেঁচো সবই পুড়ে মারা যাচ্ছে। এই ইচ্ছাকৃত দূষণের হাত থেকে জমিকে বাঁচাতে আমরা খড়ের বিকল্প ব্যবহার পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। যেমন জৈবসার তৈরি করতে পারি। মাশরুম চাষে খড় ব্যবহার করতে পারি। প্যাকিং শিল্পে ব্যবহার করতে পারি।’’ হুগলি কৃষি ভবনের আতমা বিভাগের এই উদ্যোগে কোন্নগর যুক্তিমন জয়ন্ত পাঁজা এবং হাউলের নন্দিতা কর্মকার ও মল্লিকা ঘোষকে নিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকদের কাছে সচেতনতা প্রচারে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ‘সন্তোষজনক সাড়া’ মিলেছে বলে জানান কল্যাণ।

অন্য বিষয়গুলি:

Air pollution Hooghly Agriculture Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy