পদক হাতে সৌমিতা। ছবি: তাপস ঘোষ
জিমন্যাস্ট হিসাবে তিনি সফল। প্রশিক্ষক রূপেও সাফল্য এসেছে। নামডাক হয়েছে বিচারকের ভূমিকায়। তবে এখন সবই অতীত। এক সময়ে ফ্লোরে দাপিয়ে বেড়ানো বাংলার জিমনাস্ট সৌমিতা সাহা দে’র চলাফেরার শক্তি কেড়েছে স্নায়ুর রোগ। মেলেনি চাকরি। চেয়েচিন্তে ওষুধ জোগাড় হয়।
রাজ্য সরকারের উপরে একরাশ অভিমান নিয়ে হুগলির বাঁশবেড়িয়ার সাহাগঞ্জের বাড়িতে শুয়ে দিন কাটে পঁয়ত্রিশ বছরের ক্রীড়াবিদের। তবে হারতে তিনি রাজি নন। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য জিমনাস্টিক ফ্লোর না হলেও বেছে নিতে চান খেলার মাঠ। আগামী ১৬ মার্চ পুনেতে প্যারা অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে শটপাট ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সৌমিতা।
সম্প্রতি চুঁচুড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হুইল চেয়ার দিয়েছে তাঁকে। সেই বাহনে বসেই নতুন ভাবে মেলে ধরার চেষ্টা করবেন নিজেকে। চুঁচুড়ার ওই সংগঠনের কর্তা ইন্দ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘সৌমিতা যাতে জীবনের নতুন লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে পারেন, সে জন্যই হুইল চেয়ার দেওয়া হয়েছে।’’
১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত— ১১ বছরে কখনও বিদ্যালয় পর্যায়ে, কখনও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে জিমনাস্টিক্সের জাতীয় মিটে খেলোয়াড় হিসাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বঙ্গকন্যা। প্রিয় ইভেন্ট ছিল, ‘টেবিল ভল্ট’। একের পর এক সাফল্য দেশজোড়া পরিচিতি এনে দিয়েছে।
২০০৮ সালে জাতীয় জিমন্যাস্টিক্স প্রশিক্ষণ কোর্স পাশ করে বছরখানেক চেন্নাইতে প্রশিক্ষক হিসাবে চাকরি করেন। পরের বছর আন্তর্জাতিক বিচারক কোর্স করেন। ২০১০ সালে দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমসে বিচারক ছিলেন। তাতেও নজর কাড়েন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডাক আসতে থাকে।
এরপরেই অবশ্য চাকা উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করে। ২০১২ সালের অগস্ট মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন সৌমিতা। ফ্লোরে আর ফেরা হয়নি। চিকিৎসকেরা জানান, জটিল স্নায়ুরোগ। দু’পা ফুলতে থাকে। শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।
সৌমিতা জানান, চেন্নাইতে প্রশিক্ষক হিসাবে তাঁর হাত ধরে একাধিক জিমনাস্টের উত্থান হয়েছিল। সে কথা মাথায় রেখে অসুস্থতার কথা জানতে পেরে যোগাযোগ করেছিল তামিলনাড়ু সরকার। ২০১৫ সালে কলকাতায় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তামিলনাড়ুর তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী এসে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে যান। সেই খবর প্রকাশ হতে এ রাজ্যের সরকার হাসপাতালের বিল মেটায়। তবে ওই পর্যন্তই।
সৌমিতা জানান, হাসপাতাল থেকে ফিরে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হত। ওষুধের বিল নিয়ে মাস দুয়েক পরে রাজ্যের ক্রীড়া দফতরে যান বাবা শ্রীমন্তকুমার দে। তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানাল পরিবার। তামিলনাড়ু সরকারের দেওয়া টাকা থেকে ওষুধ খরচ চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সৌমিতার আক্ষেপ, ‘‘রাজ্য সরকার আর ফিরেও তাকায়নি।’’
খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত অনেকের বক্তব্য, ক্রিকেটের মতো খেলায় সাফল্য পেলে জেলা প্রশাসন থেকে তাবড় জনপ্রতিনিধি ঘটা করে সংবর্ধনা দেন। কিন্তু কোনও খেলোয়াড় বিপাকে পড়লে নজরে পড়ে না।
হুগলি জেলা জিমনাস্টিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘একটা হুইল চেয়ারের জন্য সৌমিতার মতো জিমনাস্টকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে যেতে হচ্ছে। ভাবতেও খারাপ লাগে। সৌমিতার জন্য সরকারের কিছু একটা করা দরকার। একটা চাকরি দেওয়া উচিত।’’
জেলা ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ আধিকারিক অলিভিয়া রায় জানিয়েছেন, সৌমিতার পরিস্থিতির কথা তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, ‘‘উনি (সৌমিতা) হয় তো রাজ্য স্তরে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের কাছে কোনও আবেদন করলে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy