বাগনানের বিরামপুরে রূপনারায়ণের ধস মেরামতির কাজ বন্ধ (বাঁ দিকে)। ক্ষতিগ্রস্ত দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধ। আরামবাগের পশ্চিম সালেপুরে। নিজস্ব চিত্র।
কাঁচামাল অর্থাৎ ল্যাটেরাইট বোল্ডার মিলছে না। ফলে, হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলাতেই বেশ কিছু ায়গায় নদীবাঁধ সংস্কারের কাজ থমকে গিয়েছে। অনেক কাজ শুরুই করা যায়নি। চিন্তা বাড়ছে দুই জেলার সেচ দফতরের। বিকল্প হিসেবে তাঁরা ‘স্টোন বোল্ডার’ ব্যবহারের অনুমতি চাইছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
সাধারণত বাঁধ মেরামতির কাজ হয় নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ, এখন সেই কাজের ভরা মরসুম হলেও হাত গুটিয়ে থাকতে হচ্ছে সেচ দফতরকে। তারা জানিয়েছে, হাওড়ায় অন্তত ১২টি জায়গায় বাঁধ মেরামতির কাজ থমকে আছে। হুগলিতে আরামবাগের তিন জায়গায় দ্বারকেশ্বরের বাঁধের কাজ এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় দামোদরের বাঁ দিকের বাঁধ বরাবর ধনেখালি থেকে তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়ায় ৩৯.২০ কিমি বন্যা নিয়ন্ত্রণে যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে তা-ও এগোচ্ছে না।
অথচ, দুই জেলারই বেশ কিছু অঞ্চল বন্যাপ্রবণ। রয়েছে ভাঙনের সমস্যাও। ফলে, আগামী বর্ষার আগে কাজ শেষ না হলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকছে।
কেন মিলছে না ওই বোল্ডার?
সেচ দফতর সূত্রের খবর, এই দুই জেলায় বাঁধ সংস্কারের জন্য যে ল্যাটেরাইট বোল্ডার ব্যবহার হয়, তা মেলে পশ্চিম মেদিনীপুরে। দূরত্ব কম হওয়ায় তা আনতে কম খরচ হয়। তা ছাড়া, এই বোল্ডারের দামও কম। প্রতি টন ৯০০-৯৫০ টাকা। বোল্ডার গুঁড়ো করে মোরামও তৈরি হয়। যা দিয়ে বাঁধের সংস্কার করা অংশে রাস্তা বানানো যায়। সেই কারণে দু’টি জেলায় এই বোল্ডার দিয়ে বাঁধ মেরামতি হয়।
কিন্তু গত বর্ষার মরসুম থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন খাদানের বোল্ডার তোলা বন্ধ করেছে সেখানকার জেলা প্রশাসন। তারা জানিয়েছে, রাজ্য সরকার মিনারেল অ্যান্ড মাইনিং কর্পোরেশন গঠনের পরে নয়া নিয়মে বালিখাদান থেকে বালি তোলার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দিলেও বোল্ডারের ক্ষেত্রে এখনও তা দেয়নি।
ফলে, বোল্ডারের জোগান নেই। বাগনানের বিরামপুর থেকে মেল্লক পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার অংশে রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙেছে এবং পাড়ে ধস নেমেছে। নদীর ধারেই সামতাবেড়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। এখানে জেলা পরিষদ এবং বাগনান-২ পঞ্চায়েত সমিতি যৌথ ভাবে পর্যটনকেন্দ্র গড়ছে। বাঁধ এবং ধস মেরামত না হলে আগামী বর্ষায় শুধু যে শরৎচন্দ্রের বাড়ির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তা-ই নয়, ভেস্তে যেতে পারে পর্যটনকেন্দ্রের পরিকল্পনাও। থাকছে বন্যার আশঙ্কাও। এক বছর আগে এখানে ঠিকা সংস্থা কাজ শুরু করেও বোল্ডারের অভাবে বন্ধ করে দেয়।
হাওড়ায় ছ’টি জায়গায় বাঁধ মেরামত হচ্ছে গ্রামোন্নয়ন উন্নয়ন তহবিলের (আরআইডিএফ) টাকায়। তার টেন্ডার হলেও কোনও ঠিকা সংস্থাকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়নি বোল্ডারের অভাবে।
হুগলিতে সেচ দফতরের নিম্ন দামোদর বিভাগের বন্ধ থাকা তিনটি কাজই আরামবাগ মহকুমার দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধে। তার মধ্যে সালেপুর পশ্চিমপাড়া এবং ডিঙাডুবির কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। সেগুলির প্রায় ৪৫-৪৮ শতাংশ কাজ হয়ে যাওয়ার পর বন্ধ। আরামবাগ পুর এলাকার কাজও থমকে আছে।
জেলা সেচ দফতরের(নিম্ন দামোদর) এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পাল বলেন, “ল্যাটেরাইট বোল্ডার মিলছে না। বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁদের সিদ্ধান্ত মতোই পরবর্তী কাজ হবে।”
জেলায় বাঁধ সংস্কারের জন্য নিয়মিত প্রশাসনের কাছে তদ্বির করেন আমতার প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘সেচ দফতরের এখনই বিকল্প ব্যবস্থা করার দরকার। না হলে বিপদ ঠেকানো যাবে না।’’
হাওড়া জেলা সেচ দফতরের নিম্ন দামোদর নির্মাণভুক্তি-১ এবং ২ বিভাগের পক্ষ থেকে থেকে জানানো হয়েছে, বীরভূমের পাঁচামি থেকে ‘স্টোন বোল্ডার’ এনে কাজ করানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তার দাম অনেক বেশি। প্রায় ১৭০০ টাকা টন। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাজ করা যাবে না। একই বক্তব্য হুগলি জেলা সেচ দফতরেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy