তোড়জোড়: বিশ্বকর্মা পুজোর আগে কারখানায় মেশিন পরিষ্কার করায় ব্যস্ত এক কর্মী। শুক্রবার, হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
অলিগলির কারখানায় মাত্রাতিরিক্ত শব্দে সাউন্ড বক্সে গান। গোলা থেকে ট্রলিতে তুলে বিশ্বকর্মা ঠাকুর কিনে নিয়ে যাওয়ার হুড়োহুড়ি। পুজোর উপকরণ কেনার ঠাসাঠাসি ভিড়। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন শুক্রবারেও এ সব কিছুই প্রায় দেখা গেল না হাওড়ায়। বলা যায়, জৌলুস হারিয়ে বিশ্বকর্মা পুজোয় ধুঁকছে প্রাচ্যের এই ‘শেফিল্ড’। কাজের বরাত নেই, কাজ করেও মিলছে না টাকা। তাই ঘটেই বিশ্বকর্মার পুজো সারতে বাধ্য হচ্ছেন কলকারখানার অধিকাংশ মালিক।
হাওড়া শহরের বালিটিকুরি, দাশনগর, ইছাপুর, কামারডাঙা, কদমতলা, টিকিয়াপাড়া, বেলিলিয়াস লেন জুড়ে প্রায় প্রতি ঘরে কুটির শিল্পের মতোই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় হাজারখানেক কারখানা। এক সময়ে সেই সব কারখানায় দেশ-বিদেশের বড় কারখানার চাহিদা মতো যন্ত্রাংশ তৈরি করতেন দক্ষশ্রমিকেরা। ঢালাই শিল্পে গোটা দেশে হাওড়ার স্থান ছিল প্রথম। ফলে বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে জাঁকজমক, আমোদ হত। এখন সেখানে চলতি বাজারে লোহার দামের নিত্যদিনের ওঠা-নামায় তাল রাখতে না-পেরে কার্যত ধুঁকছে হাওড়ার পশ্চিম তীরের এই শহর। কাঁচা মাল কিনতে চড়া জিএসটি, পুরনো বকেয়া টাকা না পাওয়া বা কাজ করলেও টাকা পেতে বিলম্ব, গোটা শিল্পাঞ্চলকেই রুগ্ন করে দিয়েছে।
টিকিয়াপাড়া রেল স্টেশন সংলগ্ন কারখানায় লেদ মেশিন মুছতে মুছতে ব্যবসায়ী দীপঙ্কর পোদ্দার বললেন, ‘‘কাজের বরাত নেই। বকেয়া পড়ে রয়েছে ১১ লক্ষ টাকা। এক বছর ধরে সেই টাকাও পাচ্ছি না। কী করে বড় করে বিশ্বকর্মা পুজো করব? যেটা করছি, সেটাও ৫৮ জন ব্যবসায়ী মিলে কোনও রকমে হচ্ছে।’’ পাশের কারখানার অসিত মাইতির বক্তব্য, এ বছর ব্যবসার যা পরিস্থিতি, কোভিডেও এমন দশা হয়নি। ৫০০ কেজি লোহা কিনে জিএসটি দিতে গিয়েই তো শেষ হয়ে যাচ্ছি। তাই অনেকেই এ বার মূর্তির বদলে ঘটে পুজো সারছেন।’’
ঢালাই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বালিটিকুরির দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী ‘দাশনগর-বালিটিকুরি ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি অসিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন ব্যবসার যা অবস্থা, পেসমেকার বসিয়ে বাঁচিয়ে রাখার মতো পরিস্থিতি বলা যায়। গত কয়েক বছরে এখানে ৪০-৫০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ বার বিশ্বকর্মা পুজো করতে হয়, তাই করছি।’’ হাওড়ার বিভিন্ন কারখানা ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের বয়ানে উঠে আসে এই একই হা-হুতাশ।
দুর্গাপুজোর আগে যে হাওড়া শহর মেতে উঠত আলোর রোশনাই, খাওয়াদাওয়া এবং অনুষ্ঠানের জাঁকজমকে, সেই শহর সে সব থেকে আজ অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy