হুগলিতে অর্ধেকের বেশি পঞ্চায়েতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিকাঠামো গড়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কোনওটির কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগে, কোনটির বা তারও বেশি। কিন্তু অধিকাংশই পঞ্চায়েতে সেই প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। উদ্বোধন হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে, যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা চলছেই। অধিকাংশ পঞ্চায়েতের প্রধান এবং উপপ্রধানেরা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সমস্যাতেই নিষ্ক্র্রিয় আছে প্রকল্প।
তৈরি প্রকল্পগুলি চালু করার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা স্বীকার করে একাধিক বিডিও মানছেন, গ্রামবাসীদের উৎসাহিত করতে সময় লাগছে। একই সঙ্গে প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পঞ্চায়েতগুলিও প্রকল্প থেকে আয়ের হিসাব করছে। আপাতত ছ’মাস ব্লক প্রশাসন থেকে তহবিল দিয়ে কাজ করানোর কথা বলা হলেও বিশেষ সাড়া মিলছে না। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের সুপারভাইজ়ারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।”
গত বছরের ৭ মার্চ জেলাশাসক মুক্তা আর্য গোঘাট ১ ব্লকের ভাদুর পঞ্চায়েতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল, ভাদুর গ্রামে প্রায় ১২ কাঠা খাসজমিতে ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা প্রকল্পটিতে এলাকার ১২টি গ্রামের যাবতীয় কঠিন অপচনশীল এবং পচনশীল বর্জ্য তুলে আনা হবে। সে জন্য নির্দিষ্ট চেম্বারও করা হয়। বর্জ্য সংগ্রহের জন্য জেলা পরিষদ থেকে তিনটি ব্যাটারি চালিত গাড়ি (ই-কার) দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রাম থেকে বর্জ্য তুলে আনার কাজ শুরুই হয়নি।
পঞ্চায়েত প্রধান সেরিফা বেগম বলেন, ‘‘প্রকল্প চালু তো করা হবে। কিন্তু ওই কাজে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হবে কোথা থেকে? ৬-৭ জনের বেতন পঞ্চায়েত থেকে দেওয়ার মতো নিজস্ব তহবিল নেই।’’ তিনি জানান, ফের গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরিবারগুলির কাছ থেকে এ বাবদ মাসিক কর নেওয়া হবে, নাকি পঞ্চায়েত থেকেই আপাতত চালানো হবে।
একই রকম ভাবে ২০২৩ সালে পরিকাঠামো তৈরি ও ই-কার পেয়েও কাজ শুরু হয়নি গোঘাট ২ ব্লকের বদনগঞ্জ-ফলুই ১ পঞ্চায়েতে। গোঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ প্রদীপ রায় জানান, পঞ্চায়েতগুলির আয়তন, পরিবার ও জনসংখ্যার বিচারে প্রতিটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পপিছু অন্তত ৬-৭ জন শ্রমিক নিয়োগ করতে হবে। তাঁদের মাথাপিছু দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি মেটানো কোনও পঞ্চায়েতের পক্ষেই সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে একমাত্র পথ, গ্রামে পরিবারপিছু অন্তত মাসিক ২০-২৫ টাকা করের ব্যবস্থা করা। এ নিয়ে গ্রামগুলিতে প্রচার চালানো হচ্ছে।
প্রতিটি পঞ্চায়েতে কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ার নির্দেশিকা ছিল ২০১৭ সালের গোড়ায়। কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এই নির্দেশের পরে আট বছর কেটে গেলেও হুগলি জেলায় ২০৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে এখনও পর্যন্ত হয়েছে ওই প্রকল্প হয়েছে ১৪৬টিতে। এ কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বাকি পঞ্চায়েতগুলিতে প্রকল্পের পরিকাঠামোর জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)