ভোটের বাকি পাঁচ দিন। তার আগে শেষ রবিবারের সকালে পান্ডুয়া স্টেশন রোডে তৃণমূল কার্যালয়ের শাটার বন্ধ। স্থানীয় স্টেশন বাজারের কার্যালয়েও তালা। এমন আরও আছে। অথচ, ভোটের পান্ডুয়া শাসক দলের এই সব কার্যালয়ে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় দেখতেই অভ্যস্ত। এখন সন্ধ্যায় খুললেও ভাঙা হাট!
হলটা কী?
দেখা যাচ্ছে, দলের প্রার্থী হতে না-পারা নেতাদের কার্যালয়ই খাঁ খাঁ করছে। নেতা-কর্মীদের কথায় উঠে আসছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাও। দলের প্রতীক না-পেয়ে নেতা নির্দল হয়ে দাঁড়ানোয় রাতারাতি কার্যালয়ের রূপ বদলেছে, এমনও আছে।
তৃণমূলের কেন্দ্রীয় কোনও কার্যালয় সেই অর্থে হুগলিতে নেই। বিভিন্ন মাপের নেতাদের নিজস্ব কার্যালয় থাকে। যখন যিনি পদে থাকেন, তিনি যে কার্যালয়ে বসেন, সেটিই কার্যত ক্ষমতার ভরকেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। ব্লকেও তাই। পান্ডুয়ায় যেমন ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি এবং এ বারেরও প্রার্থী সঞ্জয় ঘোষের কার্যালয় যথারীতি কর্মীদের ভিড়ে ঠাসা থাকছে।
পান্ডুয়া স্টেশন রোডের কার্যালয়টি দলের জেলা সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি সৈয়দ রহিম নবির। প্রচারে তাঁর দেখা নেই। ফুটবলার নবি থাকছেন কলকাতায়। ফোনে দাবি করলেন, ভাই ফিরোজ অসুস্থ থাকায় সকালে কার্যালয় খোলা যাচ্ছে না। সন্ধ্যায় খোলা হয়।
স্টেশন বাজারের কার্যালয়টি দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অসিত চট্টোপাধ্যায়ের। প্রবীণ নেতার কপালে প্রার্থিপদ জোটেনি। সন্ধ্যায় গুতিকয়েক কর্মী নিয়ে কার্যালয়ে বসছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দল যোগ্য মনে করেনি বলেই প্রার্থী করেনি। আমার আবেদনে কর্মীরা প্রচারে যাচ্ছেন। তাই, কার্যালয়ে আসছেন না। ডাকলে, আমিও যাব প্রচারে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জীব ঘোষের খেদ, ‘‘বড় নেতানেত্রীরা যোগাযোগ করছেন না। রোজ কার্যালয়ে আসি। কিছুক্ষণ থেকে ফিরে যাই।’’ হরাল-দাসপুর পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান, অসিত-অনুগামী হাসিনুর রহমানও প্রার্থী নন। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটে আমাদের দল ডাকেইনি। কর্মী-সমর্থকেরাও পার্টি অফিসমুখো হচ্ছেন না।’’ পান্ডুয়া স্টেশনের দক্ষিণে শেখ সরিফউদ্দিনের কার্যালয়ও বন্ধের তালিকায়।
সঞ্জয়ের বক্তব্য, ‘‘কোন কার্যালয় বন্ধ, জানি না। কর্মীরা প্রচারে যাচ্ছেন। সব নেতাকেই প্রচারে থাকার অনুরোধ করেছি আমি নিজে।’’
পান্ডুয়া হাইমাদ্রাসার কাছে কার্যালয়ে সাংসদ থাকাকালীন রত্না দে নাগ বসতেন। বিধায়ক হয়েও বসেছেন। কার্যালয়টির দখল রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ সেবগাতুল্লাহের হাতে। দল প্রার্থী না-করায় তিনি সরাই-তিন্না পঞ্চায়েতে নির্দল হয়ে লড়ছেন। কার্যালয় থেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরেছে। জোড়াফুলের বদলে এখন নির্দলের ‘নৌকা’ চিহ্ন দেখা যাচ্ছে কার্যালয়ে।
সেবগাতুল্লাহের কথায়, ‘‘খরচ করে ওই কার্যালয় তৈরি করেছি। তাই, এখন নির্দল কার্যালয় করলাম।’’ একই ভাবে পাঁচগড়া-তোরগ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ৬ জন নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। নিয়াল গ্রামের কার্যালয় থেকে ‘তৃণমূল’ শব্দটি মুছে দিয়েছেন তাঁরা। এখন তা নির্দল কার্যালয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)