উদ্দেশ্য ছিল কুম্ভস্নান। কিন্তু প্রয়াগরাজে পৌঁছনোর আগেই ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল পশ্চিমবঙ্গের ছ’জনের। এর মধ্যে তিন জন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার নলপা গ্রামের ও বাকি তিন জন হুগলির গোঘাট থানা এলাকার বাসিন্দা। গুরুতর জখম আরও তিন জনের চিকিৎসা চলছে ধানবাদের পাটলিপুত্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে ধানবাদের কাছে রাজগঞ্জ সড়কে। ঘটনাস্থলেই মারা যান গড়বেতার প্রণব সাহা (৪২), তাঁর স্ত্রী শ্যামলী সাহা (৩৪)। পরে মারা যান প্রণবের শ্যালিকা গোঘাটের সাতবেড়িয়ার বাসিন্দা পিয়ালি সাহা (৩২) ও গাড়ির চালক গোঘাটের ভাদুরের শেখ রজব আলি (৪৬)। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় পিয়ালির মেয়ে আগমনী সাহা (৬) ও শ্যামলীর মেয়ে অন্বেষার (৫)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন পিয়ালির স্বামী বছর তেতাল্লিশের বিশ্বরূপ এবং শ্যামলীর ছেলে বছর পনেরোর অমল। দুর্ঘটনার পরে সমাজমাধ্যমে শোকপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে পরিবারগুলিকে সবরকম সাহায্য করতে বলা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে।’’
প্রণবের গাড়ি সারানোর গ্যারাজ ছিল। বিশ্বরূপ চাষবাস করতেন। সঙ্গে ট্রাক্টরের ব্যবসাও ছিল। ওই দুই পরিবারের তরফে গোঘাটের সাতবেরিয়ার বিশ্বরূপ দু’টি গাড়ি ভাড়া করেছিলেন। গড়বেতা থেকে প্রণবরা বিশ্বরূপদের গোঘাটের বাড়িতে চলে এসেছিলেন শুক্রবার সকালেই। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ গোঘাট থেকে গাড়ি দু’টি রওনা দেয়। রাত দেড়টা নাগাদ ধানবাদের কাছে ঘটে দুর্ঘটনা। একটি গাড়ির সঙ্গে লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। একটি বাস ও আরও কয়েকটি গাড়িও পিছন থেকে ধাক্কা মারে ওই গাড়িটিকে। সেটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
শনিবার ভোর ৪টা নাগাদ বাড়িতে দুর্ঘটনার খবর আসে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে চালক-সহ ছিলেন ১১ জন। ওই গাড়িতে থাকলেও বেঁচে গিয়েছেন বিশ্বরূপের প্রতিবেশী রাহুল রায়। শনিবার তিনি বলেন, “ধানবাদে রাত ১১টা নাগাদ খাওয়া সেরে ফের রওনা দিই। ঘুম পাচ্ছিল সবারই। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই দুর্ঘটনায় রক্তারক্তি ও প্রিয়জনদের মৃত্যু দেখতে হল। কী ভাবে কী হল, কারা উদ্ধার করল— সে সব দেখার মতো অবস্থা ছিল না।”
একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন গড়বেতার নলপা গ্রাম। প্রণবের পরিজনেরা জানালেন, কয়েকদিন কাজ বন্ধ রেখে ছেলেমেয়ে নিয়ে গাড়ি ভাড়া করে মহাকুম্ভে গিয়েছিলেন তাঁরা। সঙ্গে নিয়েছিলেন শ্যালিকার পরিবারকেও। শনিবার সকালে নলপা গ্রামে গিয়ে এই পরিবারের পাশে দাঁড়ান গড়বেতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ সহ অনেকেই। মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারের পাশে আমাদের দলীয় কর্মীরা আছেন। জখমদের চিকিৎসার খোঁজ নিচ্ছি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)