—প্রতীকী চিত্র।
পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জল থেকে কখনও বেরোচ্ছে জোঁক, বিছে, পোকামাকড়। কখনও বেরোচ্ছে দুর্গন্ধযুক্ত কালো ময়লা। সেই দূষিত জল পান করে ইতিমধ্যেই আন্ত্রিক ও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন একাধিক মানুষ। বর্তমানে এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই কেউ না কেউ পেটের অসুখে আক্রান্ত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আতঙ্কিত বাসিন্দাদের অনেকেই বোতলবন্দি জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। যাঁদের সেই সাধ্য নেই, তাঁরা ওই নোংরা জলই ফুটিয়ে খাচ্ছেন।
গ্রীষ্মের মুখে এমনই অবস্থা হাওড়া পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাতকড়ি চ্যাটার্জি লেন, মধুসূদন বিশ্বাস লেন, নুর মহম্মদ মুন্সী লেন-সহ টিকিয়াপাড়ার বিভিন্ন এলাকায়। পুরসভার দাবি, ওই এলাকায় গ্যালভানাইজ়েশন কারখানা (স্থানীয় ভাষায় কলাই ঘর) থেকে প্রতিদিন অ্যাসিড-মিশ্রিত বর্জ্য তরল ফেলার কারণে নর্দমার পাশে থাকা পুরসভার পাইপলাইনে অজস্র ফুটো তৈরি হয়েছে। যার ফলে পানীয় জলের সঙ্গে নর্দমার জল মিশে গিয়ে এই ঘটনা ঘটছে। কয়েক দিন আগেই পরিস্রুত ও পর্যাপ্ত পানীয় জল সরবরাহের জন্য হাওড়া পুরসভাকে পুরস্কৃত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই পুরসভারই সরবরাহ করা পানীয় জল নিয়ে এই ঘটনা ঘটায় পুরকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
মধ্য হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোডের পাশে তস্য গলির মধ্যে নুর মহম্মদ মুন্সী লেনের একটি কলাই ঘরের কাছে গিয়ে দেখা গেল, পাশের নর্দমার জলের রংটাই পাল্টে গিয়েছে। সেই নর্দমায় বইছে লাল বা রুপোলি রঙের তৈলাক্ত রাসায়নিক। নর্দমার মধ্যেই ডুবে রয়েছে পুরসভার পাইপলাইন থেকে সংযোগ নেওয়া বিভিন্ন বাড়ির জলের পাইপ। তাই নর্দমার অ্যাসিড-মিশ্রিত তরল পাইপের ফুটো দিয়ে অনায়াসে মিশে যাচ্ছে পানীয় জলের সঙ্গে। এলাকার বাসিন্দা পার্থ ঘোষ, পীযূষ মুখোপাধ্যায়েরা বললেন, ‘‘বর্ষায় এই জায়গায় কোমর সমান জল জমে। সেই সমস্যা আজও মেটেনি। এরই মধ্যে গ্রীষ্মের আগেই পুরসভার পাইপলাইনে নর্দমার জল মিশে যাওয়ায় তা থেকে আন্ত্রিক, জন্ডিস-সহ নানা ধরনের পেটের রোগে ভুগছেন পাড়ার অনেকে।’’
ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রীপর্ণা চন্দ বলেন, ‘‘ওই জল খেয়ে আমিও দু’বার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমারও আন্ত্রিক হয়েছিল।’’ আর এক বাসিন্দা সুলেখা ঘোষের অভিযোগ, পুরসভার জল থেকে বিছে, জোঁক, পোকামাকড়, এমনকি ছোট ছোট শামুকও বেরোচ্ছে। সেই সঙ্গে দুর্গন্ধ। ওই জল পান করে তাঁর বাড়ির চার জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এলাকার বাসিন্দারা পুরসভার পাইপলাইন থেকে বেরোনো এক গ্লাস ঘোলাটে জল এনে দেখালেন, তাতে ভাসছে বিছে, পোকামাকড়। ক্ষিপ্ত বাসিন্দাদের বক্তব্য, অবিলম্বে এই সমস্যা না মিটলে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
পানীয় জলে যে সমস্যা থাকতে পারে, তা মানছেন পুরসভার চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকার কলাই ঘর থেকে অ্যাসিড-মিশ্রিত তরল সরাসরি নর্দমায় ফেলায় নর্দমার নীচে থাকা বা পাশ দিয়ে যাওয়া লোহার পাইপলাইন ফুটো হয়ে গিয়েছে। ফলে নর্দমার জল পানীয় জলে মিশে গিয়ে থাকতে পারে। তবে, এই সমস্যা মারাত্মক কিছু নয়। আমি সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পাঠাচ্ছি। এলাকায় যাতে নিয়মিত জলের গাড়ি পাঠানো যায়, সেই নির্দেশও দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy