মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপর বাঁশের সাঁকো ভেঙে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
বৃষ্টি এবং ডিভিসি-র ছাড়া জলে নদনদীর জলস্তর বেড়ে স্রোত এতটাই প্রবল হয়েছে যে তার ধাক্কায় দুই জেলায় ১৪টি সাঁকো ভেঙে পড়ল। ফলে, বিপাকে পড়লেন বহু গ্রামবাসী। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাঁকোগুলি দ্রুত মেরামতের আশা নেই। ফলে, দুর্ভোগ কতদিন চলবে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না কয়েক হাজার ভুক্তভোগী।
মুণ্ডেশ্বরী ও রূপনারায়ণ দিয়ে ঘেরা হাওড়ার ‘দ্বীপাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত আমতা ২ ব্লকের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান ও ভাটোরা— এই দুই পঞ্চায়েত। শনিবার রাতে হাওড়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনানের তিনটি সাঁকো ভাঙে। একইসঙ্গে ভেঙেছে ভাটোরার সঙ্গে হুগলির খানাকুলের পানশিউলির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী একটি বাঁশের সাঁকো। চারটি সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় দু’টি পঞ্চায়েত পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ভাটোরার ভেঙেছে গায়েনপাড়া ও গোলাবাড়ি ফেরিঘাটের সাঁকো এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনানের কুলিয়াঘাট ও আজানগাছি টাকিপাড়া ফেরিঘাটের সাঁকো। এর মধ্যে গায়েনপাড়া, কুলিয়াঘাট এবং টাকিপাড়া ফেরিঘাট মুণ্ডেশ্বরীতে। গোলাবাড়ি ফেরিঘাটটি রূপনারায়ণ নদে।
রবিবার অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নৌকা ভাড়া করে হাট-বাজারে আসেন। কোনও গাড়ি না-চলায় এক অসুস্থ মহিলাকে পরিজনেরা কাপড়ের দোলায় চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকায় তোলেন। দু’টি পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও কিছু যন্ত্রচালিত নৌকার ব্যবস্থা করা হয়। তবে, এই পরিস্থিতিতেও নৌকার ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসীরা। নৌকাগুলিতে কোনও লাইফ-জ্যাকেটও ছিল না। বেলা দু’টোর পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে দুই নদীতেই জল বাড়তে থাকে। স্রোতেও তীব্রতা দেখা যায়।
পরিস্থিতি দেখতে এলাকায় আসেন আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল এবং এই বিধানসভারই প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র। আসেন জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি-ও। তিনি বলেন, ‘‘নদীর যা পরিস্থিতি, তাতে নৌকা চলাচল বিপজ্জনক। শুধুমাত্র একটি লঞ্চ রাখা হয়েছে অসুস্থদের ব্যবহারের জন্য। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সাঁকো তৈরি করাও যাবে না।’’ বিধায়ক জানান, দ্বীপাঞ্চলের নানা জায়গায় স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে ক্যাম্প করা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে।
এ হেন পরিস্থিতিতে কুলিয়াঘাটে পাকা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। প্রসঙ্গত, গত বছরের মাঝামাঝি ৩২ কোটি টাকা খরচ করে কুলিয়ঘাটে পাকা সেতুর কাজ শুরু করে
পূর্ত দফতর। দফতরের মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ
২০২৫ সালের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করতেই হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছি।’’
মুণ্ডেশ্বরী নদী বরাবর হুগলির আরামবাগের মলয়পুর, খানাকুল ১ ব্লকের উদনা, কুড়কুড়ি, রাধানগর কালীতলা (শাসমলঘর ফেরিঘাট), জগন্নাথপুর, কাবিলপুর, খানাকুল ২ ব্লকের চিংড়ায় সাঁকো ভেঙেছে। সব মিলিয়ে খানাকুলের দু’টি ব্লকে মুণ্ডেশ্বরী এবং তার শাখা নদীর উপর থাকা দশটি সাঁকো ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে দুই ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে, খানাকুলের দু’টি ব্লকের মুণ্ডেশ্বরী নদীর পূর্ব দিকের গ্রামগুলির বাসিন্দাদের পুরশুড়ার চিলাডাঙি হয়ে আরামবাগ বা খানাকুলের
দু’টি ব্লক অফিসে ঘুরপথে আসতে হচ্ছে। খানাকুলের দক্ষিণ প্রান্তে মুণ্ডেশ্বরী নদী এবং দ্বারকেশ্বর নদের জল যেখানে পড়ে, সেই রূপানায়ণ নদের উপর গড়েরঘাটে বাঁশের সাঁকো ভেঙে পশ্চিম মেদিনীপুরের জোতকানুগড়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বাকি শাবলসিংহপুর, হরিশচকের আজগুবিতলা, নতিবপুর, গণেশপুরে গুরুত্বপূর্ণ কাঠের সাঁকোগুলি টিকে থাকলেও যে
কোনও সময় ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy