শ্রীরামপুর থানা। —নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে হামেশাই বিতর্ক বাধে। তার মধ্যেই দেশের সেরা তিন থানার একটি হয়েছে শ্রীরামপুর। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজস্থানের জয়পুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুরস্কার তুলে দেবেন। শ্রীরামপুর থানার এই স্বীকৃতির কথা বড় মুখ করে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরস্কার কোন পথে?
গুগলের তথ্য বলছে, দেশে ১৩ হাজারেরও বেশি থানা রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বিভিন্ন রাজ্যের কিছু থানাকে বেছে হরেক মাপকাঠি সমীক্ষা করা হয়। তার ভিত্তিতেই স্বীকৃতি। ২০২২-’২৩ বর্ষে ৭১টি থানাকে নিয়ে সমীক্ষা হয়। তাতে শ্রীরামপুর-সহ পশ্চিমবঙ্গের দু’টি থানা ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সংশ্লিষ্ট সংস্থা শ্রীরামপুরে সমীক্ষা চালায় গত জুলাই-অগস্টে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অপরাধ ও অপরাধীদের তথ্য, মামলার ধরন (কোন জাতীয় মামলা বেশি বা কম ইত্যাদি), থানার দৈনন্দিন কাজ প্রভৃতির নথি, পরিসংখ্যান দেখা হয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও যাচাই করা হয়।
গঙ্গাপারে হুগলি শিল্পাঞ্চলের এই থানা সূত্রের দাবি, ওই সময়ে ছ’শোর বেশি মামলা হয়েছে। দুষ্কৃতীর হাতে খুন, তোলাবাজির জেরে খুন, গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা একটিও নেই। অধিকাংশ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে। কোনও মামলায় বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির হিসাব ডিজ়িটাল মাধ্যমে রাখা হয়। তথ্য চটজলদি খুঁজে পেতে সমস্যা হয় না। থানায় নানা কাজে আসা লোকজনের জন্য বসার জায়গা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, শৌচাগার আছে। শিশু অপরাধী, উদ্ধার হওয়া শিশুদের জন্য ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি কর্নার’ রয়েছে। আছে পুলিশকর্মীদের জন্য ক্যারম, ব্যাডমিন্টনের ব্যবস্থা। সপ্তাহান্তে বয়স্ক নাগরিকরা থানার পুকুরে মাছ ধরেন।
রাজনৈতিক দলের লোকজন কী বলছেন? বিজেপির রাজ্যনেতা ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘থানার এমন পুরস্কারে শ্রীরামপুরবাসী হিসাবে গর্বিতই হব। রাজ্য জুড়ে আইন-প্রশাসন ভেঙে পড়েছে, মানুষই দেখছেন। এর মধ্যে শ্রীরামপুরে সব ঠিক থাকলে, ভাল। তবে এর সত্যি-মিথ্যা কতটা, দেখা দরকার।’’ কয়েক মাস আগে রিষড়ায় সাম্প্রদায়িক গোলমালে এই থানা ২টি মামলা রুজু করেছিল। পরে মামলা এনআইএ-র হাতে যায়। ভাস্করের প্রশ্ন, ‘‘যদি থানা এত ভাল, পুলিশ যদি ভাল কাজই করে থাকে, এনআইএ-কে তদন্তে আসতে হল কেন!’’ থানার স্বীকৃতিতে ‘খুশি’ বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা শ্রীরামপুরের বাসিন্দা শ্যামল বসুর বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন নির্বাচনে দেখেছি, এই থানা শাসক দলের হয়ে পক্ষপাত করেছে। তবে, মস্তানি, গুন্ডামি, খুনখারাপি এখন নেই। সার্বিক ক্ষেত্রে থানার ভূমিকা ঠিক আছে।’’
রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ মানেনি শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। তাদের বক্তব্য, রিষড়ার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছিল। আদালত মনে করছে, তাই এনআইএ-কে তদন্তভার দিয়েছে। তৃণমূলের হুগলি-শ্রীরামপুর জেলা সভাপতি, চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরস্কার দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। বার বার ভোটে হারার হতাশা থেকে বিজেপি পুলিশের পক্ষপাতের কথা বলে। নির্বাচনে মানুষ স্বাধীন ভাবে ভোট দিয়েছেন।’’
শ্রীরামপুর থানার অধীনে শেওড়াফুলি, পিয়ারাপুর ও চাতরা ফাঁড়ি চালু। বন্ধ মাহেশ ফাঁড়ি আগামী পয়লা জানুয়ারি ফের চালু হবে। তবে, পুলিশকর্মীর ঘাটতি রয়েছে। থানা, ফাঁড়ি মিলিয়ে ওই সংখ্যা প্রায় ৬৫। এ ছাড়া সিভিক ভলান্টিয়ার আছেন। আইসি দিব্যেন্দু দাস-সহ থানার পুলিশকর্মীদের কাজের প্রশংসা করেছেন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy