সমরেশ সরকার এখনও হাজতেই রয়েছেন। ফাইল চিত্র।
করোনা পরিস্থিতিতে গত দু’বছর দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুচেতা চক্রবর্তী ও তাঁর চার বছরের মেয়ে দীপাঞ্জনার হত্যা-মামলার শুনানি হয়নি। হুগলির শ্রীরামপুর আদালতে বৃহস্পতিবার ফের সাক্ষ্যগ্রহণ হল। এ দিন সোহনকুমার খাটুয়া এবং সুরজ কুন্ডু নামে দু’জন সাক্ষ্য দেন। ওই জোড়া খুনে অভিযুক্ত, দুর্গাপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার (এখন সাসপেন্ডেড) সমরেশ সরকার এখনও হাজতেই রয়েছেন।
সুচেতা দুর্গাপুরের বিধাননগরের একটি আবাসনে থাকতেন। আইনজীবী মহলের খবর, সুচেতার পাশের কোয়ার্টারেই থাকেন সোহনকুমার খাটুয়া। শ্রীরামপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম কোর্ট) মনোজকুমার রাইয়ের এজলাসে সাক্ষ্য দিতে এসে এ দিন সোহন জানান, পড়শি হিসেবে সুচেতার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। সুচেতাকে তিনি ‘মামনদি’ বলে ডাকতেন। সমরেশ প্রায়ই সুচেতার কোয়ার্টারে আসতেন। রাত কাটাতেন। সমরেশকে স্বামী বলে পরিচয় দিতেন সুচেতা। ২০১৫ সালের ২৮ অগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টা-১টা নাগাদ স্কুটিতে চাপিয়ে সুচেতা এবং দীপাঞ্জনাকে নিয়ে এসে সমরেশকে ওই কোয়ার্টারে ঢুকতে দেখেন সোহন।
পরের দিন টিভির খবরে সোহন জানতে পারেন, শেওড়াফুলিতে ভুটভুটি থেকে গঙ্গায় ব্যাগ ফেলতে গিয়ে সমরেশ ধরা পড়েছেন। ব্যাগ থেকে মহিলার দেহাংশ উদ্ধার হয়েছে। এক দিন পরে অর্থাৎ, পয়লা সেপ্টেম্বর সমরেশকে ওই কোয়ার্টারে নিয়ে যায় পুলিশ। তখন তিনি সেখানে ছিলেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন সোহন।
আদালতকে সোহন আরও জানান, পুলিশ আধিকারিকরা সমরেশকে বলেন, কী ভাবে তিনি সুচেতা-দীপাঞ্জনাকে খুন করেছেন, খুনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র কোথায় আছে, তা যেন দেখিয়ে দেন। সমরেশ স্বীকার করেন, প্রথমে সুচেতাকে চৌবাচ্চায় মুখ ডুবিয়ে মেরে ফেলেন তিনি। একই ভাবে দীপাঞ্জনাকেও মারেন। তার পরে বঁটি দিয়ে নোড়ার সাহায্যে সুচেতার দেহ কেটে ফেলেন। একটি ছুরি দিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে শৌচাগারের প্যানে ফেলে দেন। সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে ওই নাড়িভুঁড়ি উদ্ধার হয়। নোড়া, ছুরি, বঁটি, ডেটলের কৌটো, ট্রেনের টিকিট, কন্ডোম প্রভৃতি জিনিসও সুচেতার কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার হয় সমরেশের উপস্থিতিতে। চৌবাচ্চা থেকে সুচেতার ভাঙা শাঁখা-পলা মেলে। পুলিশ গোটা ঘটনার ভিডিয়োগ্রাফি করে। এ দিন আদালতে সমরেশকে শনাক্ত করেন সোহন।
সুরজ কুন্ডু সুচেতার আবাসন থেকে কিছুটা দূরে থাকেন। তিনি আদালতকে জানান, টিভিতে তিনি খুনের ঘটনা জানতে পারেন। সমরেশকে সুচেতার আবাসনে আনা হচ্ছে শুনে ২০১৫ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর তিনি সেখানে যান। তিনি দেখেন, পুলিশ আধিকারিকদের কাছে খুন ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ স্বীকার করেন সমরেশ। ছুরি, নোড়া-সহ নানা জিনিস উদ্ধার হয়।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আজ যে দু’জন সাক্ষী দিলেন, তাঁদের একজন নিহতের পাশের কোয়ার্টারে থাকেন। অন্যজন উৎসাহী জনতা হিসেবে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। ওঁরা যা দেখেছেন, আদালতকে জানিয়েছেন। ওঁদের সাক্ষ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।’’
পুলিশ জানায়, সমরেশ বিবাহিত। সুচেতার সঙ্গে তাঁর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ধরা পড়ার পরে সমরেশ কবুল করেন, সুচেতা তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় তিনি ওই কাণ্ড ঘটান। সুচেতার দেহ টুকরো করে তিনটি ব্যাগে ভরে এবং অন্য একটি ব্যাগে সুচেতার মেয়ের দেহ ভরে সমরেশ ব্যারাকপুর থেকে শেওড়াফুলির মাঝে যাত্রীবোঝাই ভুটভুটি থেকে গঙ্গায় ফেলে দেন বলে অভিযোগ। ঘটনার নৃশংসতায় শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য জুড়ে। সেই মামলারই শুনানি চলছে শ্রীরামপুর আদালতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy