Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
কালো জলে উধাও মাছ, স্নানে বাড়ছে চর্মরোগ

River Pollution: কারখানার বর্জ্যে নষ্ট খালের জীব-বৈচিত্র

হুগলি এবং হাওড়া জেলা দিয়ে বয়ে চলা রাজাপুর খালের জল এখন পুরো কালো।

এই জলই দুশ্চিন্তার কারণ।

এই জলই দুশ্চিন্তার কারণ। নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
চণ্ডীতলা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২১ ০৬:৩৮
Share: Save:

আর মেলে না রুই-কাতলা-মৃগেল। সংসার চালাতে জাল গুটিয়ে অন্য কাজ ধরছেন মৎস্যজীবী।

ফলন কমে যাওয়ায় চাষে অনীহা কৃষকের। ছেলেপুলের দল ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলে ঝাঁপাঝাঁপি করে না। জলে যে শিল্পতালুকের ‘বিষ’!

হুগলি এবং হাওড়া জেলা দিয়ে বয়ে চলা রাজাপুর খালের জল এখন পুরো কালো। সেই জলে সুখের দিন ‘ডুবেছে’ দুই জেলার খালপাড়ের বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, ডানকুনি শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য নির্বিচারে ফেলার ফলেই দূষিত হচ্ছে জল। বর্জ্য শোধন না করে খালে ফেলা বন্ধের দাবিতে জনগণের তরফে আবেদন-নিবেদন কম হয়নি। কমিটি গড়ে প্রশাসনের নানা স্তরে দরখাস্ত জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবস্থা বদলায়নি।

‘রাজাপুর খাল ও কানা দামোদর নদী বাঁচাও কমিটি’র আহ্বায়ক মুজিবর রহমান মল্লিক বলেন, ‘‘বহু মানুষের রোজগারের মাধ্যম ছিল এই খাল। দৈনন্দিন কাজেও এই জল ব্যবহার হত। এখন বন্ধ।’’ পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্যে জলাশয়ের জীব-বৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। সেই কারণে মাছ উধাও হয়েছে।

হাওড়া সেচ দফতরের নিম্ন দামোদর (নির্মাণ ডিভিশন) আধিকারিক সুকান্ত দাস বলেন, ‘‘হুগলি থেকে বিভিন্ন শাখা খালের মাধ্যমেই রাজাপুর খালে দূষণ ছড়াচ্ছে। এটা কী ভাবে আটকানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আমরা কথা বলব।’’

রাজাপুর সেচখাল হুগলির চণ্ডীতলা-১ ব্লকের কানাইডাঙা থেকে শুরু হয়ে হাওড়ার ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর, পাঁচলা হয়ে উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বরের কাছে হুগলি নদীতে মিশেছে। কানা দামোদর পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কাছ থেকে শুরু হয়ে হুগলির উপর দিয়ে জগৎবল্লভপুর, পাঁচলা ও উলুবেড়িয়া-২ নম্বর ব্লকের মাগুরখালি
গ্রামে রাজাপুর খালে মিশেছে। এগুলির সঙ্গে আরও অনেক খালের সংযোগ রয়েছে।

খালপাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০১৮ সাল থেকে ব্যাপক মাত্রায় জলদূষণ শুরু হয়। চণ্ডীতলার বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যই এ জন্য দায়ী। রাসায়নিক মিশ্রিত ওই দূষিত জল চণ্ডীতলার কুমিরমোড়া খাল, মেটে খাল, কামার নালা হয়ে ডোমজুড় দু’নম্বর ব্রিজের কাছে রাজাপুর খালে পড়ছে। ওই জলে কানা দামোদর এবং কৌশিকী নদীও দূষিত হচ্ছে।

মৎস্যজীবী দিলীপ প্রামাণিকের আয়ের উৎস ছিল ঘরের কাছের রাজাপুর খাল। প্রচুর মাছ মিলত। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কালো জলে মাছ আর বাঁচে না। কোনও মাছ পাচ্ছি না। জাল গুটিয়ে রেখেছি।’’
চাষিদের একাংশের খেদ, একই কারণে ফলন কমছে। অনেকেই জানান, খালে স্নান করলে চামড়ার রোগ হচ্ছে। এই জলে বাসন ধোওয়া, কাপড় কাচাও বন্ধ করেছেন অনেকে। জলের দূষণের মাত্রা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মীরা।

দূষণ রোধে সম্প্রতি ‘রাজাপুর খাল ও কানা দামোদর নদী বাঁচাও কমিটি’র তরফে সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, হাওড়ার জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে চন্দননগরের সংগঠন ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’। সংগঠনের সভাপতি তথা পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কল-কারখানার নিকাশি জল শোধন না করে ফেলা অনুচিত। এতে অসংখ্য মানুষ যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং জীব-বৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে, তার দায় কে নেবে? প্রশাসন পদক্ষেপ করুক।’’

সমস্যার কথা মানছেন চণ্ডীতলা-১ ব্লক থেকে নির্বাচিত হুগলি জেলা পরিষদ সদস্য তথা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন কল-কারখানা নিয়ম না মানাতেই এই অবস্থা। সবাই যাতে নিয়ম মানে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দফতরে কথা বলব।’’

তথ্য সহায়তা: সুব্রত জানা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE