কালো ধানের চাষ পান্ডুয়ায় ।
জীবনযাত্রার বদল হচ্ছে মানুষের। খাবারের পরিমাণের থেকে পুষ্টিমূল্য নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এই পরিস্থিতিতে ফের দিন ফিরেছে দেশি চালের। পুষ্টিমূল্যে বেশি থাকায় ফের চাহিদা বাড়ছে এই চালের। ভাল দাম মেলায় এই চাষে আগ্রহ ফিরছে চাষিদেরও।
দেশি ধান বলতে এক কথায় প্রাচীনকালের ধানকে বলা যায়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এ রাজ্যে আমন চাষে প্রায় ৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে দেশি ধানের চাষ হয়। জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় কালোনুনিয়া, মালশিরা, উত্তর দিনাজপুরে তুলাইপাঞ্জি ও কাটারিভোগ, বর্ধমান-বাঁকুড়া-বীরভূম ও হুগলিতে গোবিন্দভোগ, বাদশাভোগ, রাধাতিলক, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় হোগলা, তালমুগুর, দুধেশ্বর, কেরালাসুন্দরী ও বহুরূপী ধানের চাষ হচ্ছে। অন্যান্য জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে দেশি ধানের চাষ হয়।
কম সময়ে অধিক ফলন পাওয়ার জন্য চাষিরা এক সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন দেশি ধানের চাষ থেকে। অন্য ধানের চাষে ফলন বেশি। ফলে দামও মেলে বেশি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা বদলাচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছবিটা বদলাচ্ছে।
পুরনো ধান খরা-বন্যা ও রোগ-পোকা সহনশীল। সার কম লাগার জন্য উৎপাদন খরচ কম। চাহিদা অনুযায়ী মুড়ি, খই, চিঁড়ে-পায়েস ও পোলাওয়ের জন্য সঠিক ধানের জাত নির্বাচন জরুরি। চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভিদ শরীরতত্ত্ববিদ পূর্ণিমা হালদার বলেন, ‘‘দেশি ধানের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী জাত আছে। এই ধানের স্বাদ-গন্ধ ভাল। প্রতিকূল আবহাওয়া সহনশীল। দেশি ধানের চালে বেশ কয়েকটি পুষ্টিগুণ আছে। যা মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ায়। উপযুক্ত জায়গা বুঝে এই ধান চাষ করলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।’’
পান্ডুয়ার জগন্নাথপুর গ্রামের চাষি অসীম চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর নিজের প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে কৃষি দফতরের পরামর্শে চলতি মরসুমে প্রথম দেশি ধান চাষ করেছেন। চলতি আমন মরসুমে শুরুতে কালোধান, দুধেশ্বর এবং খাঁড়া ধানের বীজ বপন করেন। অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে মূল জমিতে চারা রোপণ করেন। বর্তমানে জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কাটা পড়বে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচলিত ধান চাষে লোকসান হচ্ছে। জৈব উপায়ে দেশি ধান চাষ করি রফতানির জন্য। আয় বাড়ানোর আশায়।’’ অসীমবাবু এই বীজ বর্ধমানের জেলার বৈদ্যপুর থেকে কিনে এনেছেন। এলাকার চাষিরা কালোধান দেখতে মাঠে ভিড় করছেন। আগামী বছর এলাকার চাষিরা এই ধান চাষে উৎসাহীও। এই চাল বিদেশে রফতানিতে ইচ্ছুক চাষিরা কৃষি দফতরের কাছে সাহায্যের আবেদনও জানান।
রাজ্যে দেশি ধানের চাল ৬৫-১০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। হুগলিতে দেশি ধানের চালের দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি। কালো ধানের চাল ১৩০-১৫০ মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। হুগলি জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সচিব ফিরদোসুর রহমান বলেন, ‘‘কৃষিজ পণ্য আমদানি-রফতানিতে ইচ্ছুক চাষিরা সরাসরি জেলার দফতরে আসুন। কী ভাবে এই কাজ করতে হয়, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জানানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy