Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Haripal

লক্ষ্মী বিসর্জনে ডিজে নেই, স্বস্তি হরিপালে

লক্ষ্মীপুজোয় হরিপালে তারস্বরে ডিজে-মাইক বাজানো কার্যত রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কানফাটানো শব্দে প্রাণান্তকর অবস্থা হত।

ডিজেবিহীন: ব্যান্ড বাজিয়ে (নীেচ) চলছে শোভাযাত্রা। সোমবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

ডিজেবিহীন: ব্যান্ড বাজিয়ে (নীেচ) চলছে শোভাযাত্রা। সোমবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
হরিপাল শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৫৮
Share: Save:

লক্ষ্মীর ভাসান ডিজে-র কানফাটানো আওয়াজ ছাড়াই!

এমন কার্যত ‘নিরুপদ্রব’ বিসর্জন-পর্ব গত কয়েক বছর দেখেনি হুগলির হরিপাল। এ বার দেখল। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় শব্দ বলতে ব্যান্ড বা মাইকের গান।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন হরিপালবাসী। সচেতনতা দেখিয়ে বাহবা কুড়োলেন পুজো উদ্যোক্তারা। সুষ্ঠু বিসর্জনের কৃতিত্ব পাচ্ছে পুলিশও। এই পরিস্থিতি নাগরিক-আন্দোলন এবং পুলিশি তৎপরতার সুফল বলেও অনেকে মনে করছেন।

লক্ষ্মীপুজোয় হরিপালে তারস্বরে ডিজে-মাইক বাজানো কার্যত রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কানফাটানো শব্দে প্রাণান্তকর অবস্থা হত। বড় বক্স, ২৫-৩০টি মাইক বাজিয়ে এক-একটি পুজো কমিটি শোভাযাত্রা করত। এ বার অনেক কমিটি ব্যান্ডে কাজ সেরেছেন। সেই তালেই নাচে মেতেছেন। পথে পুলিশের পাহারা ছিল। মহিলা পুলিশও ছিলেন। পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র থেকে প্রচার চলেছে। ওসি কৌশিক সরকার-সহ হরিপাল থানার অন্য আধিকারিকরা রাস্তায় ছিলেন।

কৈকালার বাসিন্দা গণেশ মান্না বলেন, ‘‘ডিজের উগ্র আওয়াজে দরজা-জানলার পাল্লা কাঁপে। এ বার অনেকটা স্বস্তি মিলেছে। বক্স না বাজাতে পুলিশ প্রচার করেছে। উদ্যোক্তারা মেনেছেন। অন্যান্য বছর শব্দ-যন্ত্রণায় বাড়িতে থাকি না। এ বার শোভাযাত্রায় গিয়েছি।’’ হরিপালের মালিপাড়ার এক যুবকের বক্তব্য, ব্যাঞ্জোর সঙ্গে গোটা তিনেক মাইক থাকায় কিছুটা জোরে আওয়াজ হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের ডিজের অত্যাচারের তুলনায় তা অনেক কম। পুজোতেও বক্স বাজেনি। কালীপুজো, সরস্বতী পুজোতেও ডিজে ও বাজি বন্ধে পুলিশ সদর্থক পদক্ষেপ করবে বলে তাঁর আশা। এ নিয়ে আশ্বাস মিলেছে হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের আধিকারিকদের কাছে।

পুলিশের দাবি, লক্ষ্মীর বিসর্জনে ডিজে তো বটেই, একটিও বক্স বাজেনি। দুর্গাপুজোর সময় থেকে এ ব্যাপারে মাইকে প্রচার করা হয়। আদালতের নির্দেশের কথা বলা হয়। প্রতিটি পুজো কমিটির কাছে সেইবার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। বুঝিয়ে বলা হয়। অন্যান্য জেলা থেকে ডিজে বা বেশি শব্দ হয়, এমন বক্স যাতে না ঢোকে, সে জন্য বাসুদেবপুর, সিপাইগাছি, ঝাউতলা মোড়ে নজরদারি করে পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুজো-উদ্যোক্তাদের বোঝানো হয়েছে, তাঁরা আনন্দ করুন, কিন্তু কারও ক্ষতি না করে বা আইন না ভেঙে।’’

‘শব্দসন্ত্রাস’-এর বিরুদ্ধে হুগলি বাজি ও ডিজেবিরোধী মঞ্চ-সহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন লাগাতার আন্দোলন করছে। তার জেরে পুলিশও অনেকটা নড়ে বসেছে। হরিপালের বড়বাজারের বাসিন্দা, কাঞ্চন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘একটাও ডিজে বাজেনি। এটা পুলিশের ভূমিকার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনেরও সুফল। মানুষের ক্ষতি না করে সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল ভাবে উৎসব হোক। শব্দের অত্যাচারে দরজা-জানলা বন্ধ করতে হয়নি। এটাই তো চাই।’’

গত বছর লক্ষ্মীর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডিজে নিয়ে ধুন্ধুমার হয় হরিপালে। অভিযোগ, ডিজে বন্ধ করতে বলায় পুলিশের উপরে চড়াও হয় শোভাযাত্রায় যোগদানকারীদের একাংশ। ১৫ জন পুলিশকর্মী জখম হন। অন্তত ১৬ জন গ্রেফতার হয়। গান বাজানোর সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে বিভিন্ন ধারায়। পুলিশের ভূমিকায় মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই ঘটনার পরে সচেতনতা প্রচারেও জোরদেয় পুলিশ।

‘শব্দসন্ত্রাস’ মুক্ত হোক উৎসব, চান হরিপালবাসী।

অন্য বিষয়গুলি:

Haripal laxmi puja DJ Box
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy