E-Paper

ভাগাড়ের বিষ-ধোঁয়ায় দূষণ অব্যাহত চুঁচুড়ায়

স্থানীয়দের দাবি, গত কয়েকদিন ধরে ভাগাড়ের স্তূপ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। হাওয়া দিলেই জ্বলছে আগুন। একাধিকবার দমকল এলেও পরিস্থিতি বদলায়নি।

চুঁচুড়ার সুকান্তনগরের ভাগাড়ে আগুন লাগে শুক্রবার বিকেলে।

চুঁচুড়ার সুকান্তনগরের ভাগাড়ে আগুন লাগে শুক্রবার বিকেলে। নিজস্ব চিত্র।

সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:২৪
Share
Save

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরুর পরে বছর পেরোল। চুঁচুড়ার সুকান্তনগরের ভাগাড়ে সেই কাজ এখনও শেষ হল না। উল্টে, সেখানে উন্নত যন্ত্রের সাহায্যে পচনশীল-অপচনশীল বর্জ্য পৃথকীকরণের কাজ কিছুদিন ধরে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফের আবর্জনার স্তূপ পাহাড়ের চেহারা নিয়েছে। দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়েছে আশপাসের এলাকার বাসিন্দাদের। তার উপরে মাঝেমধ্যেই সেই স্তূপে আবার আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় আকাশ ঢাকছে। ছড়াচ্ছে দূষণ। কবে, ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, উঠছে প্রশ্ন।

স্থানীয়দের দাবি, গত কয়েকদিন ধরে ভাগাড়ের স্তূপ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। হাওয়া দিলেই জ্বলছে আগুন। একাধিকবার দমকল এলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। বাসিন্দারাও আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। শুক্রবার বিকেলে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী চড়াও হলে ভাগাড়ের অফিস বন্ধ করে কর্মীরা চম্পট দেন। পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, স্থানীয়েরাই অফিসে তালা লাগিয়ে দেন। অভিযোগ মানেননি এলাকাবাসী। সন্ধ্যা নাগাদ উত্তেজিত জনতা সরে যেতে কর্মীরা অফিসে ফেরেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিভলেও তা পুরোপুরি আয়ত্তে এসেছে বলে নিশ্চিত নন দমকলকর্মীরাও।

হুগলি-চুঁচুড়ার পুর পারিষদ (স্বাস্থ্য) জয়দেব অধিকারীর আশ্বাস, ‘‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ চলছে। কিছুটা সময় লাগবে। তারপর এই ভাগাড়েই ছেলেমেয়েরা খেলবে, পিকনিক করবে।" তিনি জানান, দরপত্রে রদবদল হবে। তাই পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। তাঁর দাবি, ভবিষ্যতে বর্জ্য দিয়ে সার তৈরির কাজ শুরু হলে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে প্রায় একই দাবি করেছেন মহকুমাশাসক (সদর) স্মিতা শুক্লও। তিনি বলেন, ‘‘ভাগাড় সমস্যা মেটানোর জন্য সব রকম প্রচেষ্টা চলছে।’’

বর্তমানে শুধু পুর এলাকার নয়, কোদালিয়া ১ পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ এলাকার বর্জ্যও ওই ভাগাড়ে ফেলা হয়। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, ভাগাড়ে রাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ধোঁয়া উড়তে থাকে দিনেও। আগুন ভয়াবহ রূপ নিলে ডাকা হয় দমকলকে। না হলে স্থানীয়েরাই নেভানোর কাজে হাত লাগান। বিষাক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইডের প্রভাবে স্থানীয় বসন্তবাগান, সুভাষপল্লি প্রভৃতি এলাকার ছোট থেকে বড় অনেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। বছর চারেক আগে এক বৃদ্ধের এই দূষণের কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। স্থানীয় তরুণী তনুশ্রী দাস বলেন, "আমাদের বেঁচে থাকাই দায়! কবে এই ভাগাড় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে জানি না।" বৃদ্ধা অমলা বিশ্বাসের খেদ, "দুর্গন্ধ আর ধোঁয়ার জেরে মাঝেমধ্যেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দূরে গিয়ে সময় কাটাতে হয়। ভাগাড়ের পাশে থাকি বলে কেউ চেয়েও দেখে না!"

ভাগাড় লাগোয়া এলাকার বাসিন্দার সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়লেও রবীন্দ্রনগর, সুকান্তনগরের পাশাপাশি কয়েকশো মিটার দূরে খাদিনা মোড়েও বিষ-ধোঁয়ার প্রভাব পড়ছে। চিকিৎকরা জানাচ্ছেন, আগুন লাগলে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতির জন্য জ্বলতেই থাকে। মিথেন গ্যাসে শ্বাসকষ্ট হয়। বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পুড়ে বায়ুদূষণ হয়। ডাইঅক্সিন এবং ক্লোরিনজাতীয় গ্যাস উৎপন্ন হয়। এতে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, গলাজ্বালা, চোখজ্বালা করে। বয়স্ক এবং শিশুরা বেশি আক্রান্ত হন। ক্যানসারও হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chinsurah Dump Yard

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।