Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ayan Sil

অয়নের আবাসন এখন দ্রষ্টব্য, প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার আবাসিকদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা!

চুঁচুড়ার চায়ের দোকান, জামাকাপড়ের দোকান, বটতলা— সর্বত্র শুধু অয়ন-শান্তনুকে নিয়ে আলোচনা। অয়ন চুঁচুড়ার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁকে নিয়ে আলোচনাটাই বেশি।

An image of the apartment

আবাসনের বাইরে উৎসুক জনতার ভিড়। ছবি: তাপস ঘোষ।

সুদীপ দাস
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৩ ০৬:০৩
Share: Save:

রাস্তাঘাটে ধেয়ে আসছে একের পর এক প্রশ্ন। ওঁদের কার্যত ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা!

অয়নের ক’টা গাড়ি? ওঁর সঙ্গে কথা হত? শান্তনুকে দেখেছেন? শান্তনু সস্ত্রীক আসতেন?— এমন কত জিজ্ঞাসা!

ওঁরা কার্যত পালিয়ে বাঁচছেন। ওঁরা— চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ায় অয়ন শীলের তৈরি আবাসনের বাসিন্দা। যে আবাসন ইতিমধ্যেই ‘দ্রষ্টব্য’ হয়ে উঠেছে অনেকের কাছে!

১৬ কাঠা জমির উপরে পাঁচতলা ওই আবাসনে প্রায় ৪০ পরিবারের বাস। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয়ের ফ্ল্যাট রয়েছে ওই আবাসনের চারতলায়। তাঁর পরিচিত প্রোমোটার অয়নেরও ফ্ল্যাট রয়েছে ওই আবাসনের পাঁচতলায়। অয়নকেও গ্রেফতার করেছে ইডি।

গত শনিবার ওই দুই ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় ইডি। দু’টি ফ্ল্যাটের অন্দরসজ্জার কথা সামনে আসার পরে রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের প্রশ্নে জর্জরিত হতে হচ্ছে আবাসনের অন্য বাসিন্দাদের। সকলের খেদ কার্যত একই, কী কুক্ষণে যে এখানে ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল!

বিশ্বনাথ বলের কথাই ধরা যাক। তিনি ওই আবাসনের বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘এমনিতেই অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা হওয়ায় সাধারণের চোখে একটু বড়লোক ছিলামই। অয়ন-শান্তনু কাণ্ডের পরে সবাই আড়চোখে দেখছেন। মনে হচ্ছে আমরাও দোষী।’’ আর এক আবাসিকের অস্বস্তি, ‘‘অফিসে গেলেই সবাই মস্করা করছেন। বলছেন, তোরা কত বড়লোক! অয়নের তৈরি ফ্ল্যাটে থাকিস। সব সময় শুনতে ভাল লাগছে না।’’ আর এক মহিলা বলেন, ‘‘বাজার-হাটে গেলেও লোকে অয়ন-শান্তনুর কথা জিজ্ঞাসা করছেন। মনে হচ্ছে, আমাদের সঙ্গে ওঁদের অনেক খাতির ছিল! গোটা ফ্ল্যাটে ওঁরা দু'জন যে আমাদের কাছেই ভিভিআইপি ছিলেন, কে বোঝাবে! ইডি-হানার পরে আমাদের আবাসন লোকে দেখতে আসছেন।’’

ওই আবাসনের বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবকের সোমবার বাজারে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মাছ নেওয়ার সময় একজন বলে বসলেন, আপনি এবিএস টাওয়ারে থাকেন না! অয়নের সঙ্গে কতবার কথা বলেছেন? ও কখন থাকত? আমি মুখ ঘুরিয়ে চলে যাই।’’ আবাসনের আর এক তরুণীও দোকানে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘দোকানে এক পরিচিত জানতে চাইলেন, অয়নের বৌ ফ্ল্যাটে এসেছিল? ওঁর ঘরটা কি বন্ধই রয়েছে? কবে যে এ সব থেকে রেহাই পাব!’’

বস্তুত, চুঁচুড়ার চায়ের দোকান, জামাকাপড়ের দোকান, বটতলা— সর্বত্র শুধু অয়ন-শান্তনুকে নিয়ে আলোচনা। অয়ন চুঁচুড়ার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁকে নিয়ে আলোচনাটাই বেশি।

ঝাঁ চকচকে ওই আবাসনে শান্তনুর আত্মীয়ের ফ্ল্যাট এবং অয়নের ফ্ল্যাট ‘সিল’ করে দিয়ে গিয়েছে ইডি। অন্যান্য ফ্ল্যাটের ঘরের তুলনায় শান্তনুর আত্মীয়ের ফ্ল্যাটের সামনেটা একটু বেশিই সাজানো-গোছানো। পাঁচতলায় উঠলেই নজর কাড়ে অয়নের ঘরের দরজা। দরজার বাইরেই ছোট সোফা পাতা। আঙুলের ছাপ বা পাসওয়ার্ড না দিলে তাঁর ফ্ল্যাটের দরজা খোলে না বলে আবাসিকদের দাবি। কখনও দরজা খোলা থাকলে পাঁচতলার বাসিন্দাদের কারও কারও অয়নের ফ্ল্যাটের অন্দরসজ্জা নজরে এসেছিল।

সেই সজ্জা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো, বলছেন কিছু আবাসিক।

অন্য বিষয়গুলি:

Ayan Sil Apartment Chinsurah ED
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy