উদয়নারায়ণপুরের জঙ্গলপুরে দামোদরের বাঁধ সংস্কারের কাজ বন্ধ। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামবাসীরা একদফা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন গত বৃহস্পতিবার। তাঁদের বাধায় শনিবার উদয়নারায়ণপুরে দামোদরের বাঁধ সংস্কারের কাজ বন্ধই হয়ে গেল। স্থায়ী ভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় ওই কাজ চলছিল। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, যে ভাবে সংস্কার পরিকল্পনা করা হয়েছে,
তাতে টাকা খরচ হলেও তা ভস্মে ঘি ঢালার শামিল হচ্ছে। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ হবে না। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সেচ দফতর এবং বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা এ দিনই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। তাতে সমাধান সূত্র মেলেনি বলে সেচ দফতর
সূত্রের খবর।
ডিভিসি ৮০ হাজার কিউসেকের বেশি জল ছাড়লেই তা দামোদর হয়ে এসে উদয়নারায়ণপুরকে ভাসায়। এই ব্লকটি সেচ দফতরের পরিভাষায় ‘স্পিল’ এলাকা। ফলে, এই ব্লকে দামোদরের পশ্চিম দিকে নতুন করে কোনও বাঁধ দেওয়া যায় না।
সেখানে পুরনো কিছু ‘জমিদারি বাঁধ’ আছে। বাঁধ আছে নদের পূর্ব দিকেও। কিন্তু উদয়নারায়ণপুরের সিংহভাগ অংশ দামোদরের পশ্চিম দিকেই পড়ে। ফলে, ডিভিসি-র জলে উদয়নারায়ণপুরের বেশিরভাগ
এলাকা ডোবে।
সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০২ সালে আমতা-২ নম্বর ব্লকের থলিয়া থেকে বাগনানের বাকসি পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার একটি খাল কাটা হয়। যাতে খালটি থলিয়ার কাছ থেকে দামোদরের বাড়তি জল নিয়ে বাকসিতে রূপনারায়ণে ফেলে। কিন্তু তাতেও উদয়নারায়ণপুরের বন্যা সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ, খালটির জলধারণ ক্ষমতা মাত্র ৩০ হাজার কিউসেক।
তারপরেই বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় প্রায় তিন বছর আগে বন্যা নিয়ন্ত্রণে নিম্ন দামোদর সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সেচ দফতর জানিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বেগুয়াহানার কাছে ডিভিসি-র ছাড়া জল দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে হাওড়া ও হুগলিতে ঢোকে। একটি অংশ যায় হুগলিতে মুণ্ডেশ্বরীতে। অন্যটি আসে হাওড়ায় দামোদরে। পরিকল্পনা হয়, বেগুয়াহানা থেকে ১৯ কিলোমিটার মুণ্ডেশ্বরীতে ড্রেজিংয়ের। যাতে ওই নদীতে
অনেক বেশি জল ঢোকে, দামোদরে কম। তা হলে উদয়নারায়ণপুরে বন্যার প্রকোপ কমবে। একইসঙ্গে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতায় দামোদরের বাঁধ সংস্কারের পরিকল্পনা করে কাজ শুরু হয়।
তা হলে কোথায় সমস্যা?
সমস্যা মুণ্ডেশ্বরীর ড্রেজিংকে কেন্দ্র করে। মুণ্ডেশ্বরীর যে ১৯ কিলোমিটার ড্রেজিং করার কথা হয়, তার মধ্যে বেগুয়াহানা থেকে পাঁচ কিলোমিটার পড়ে জামালপুরে।
বাকি অংশ হুগলিতে। পূর্ব বর্ধমানের পাঁচ কিলোমিটার অংশের মধ্যে
সাড়ে চার কিলোমিটার অংশ ১৫০ মিটার চওড়া করে এবং বাকি ৫০০ মিটার ৭৫ মিটার চওড়া করা ড্রেজিং করা হবে বলে সেচ দফতর জানায়। তাতেই চটে যান উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দারা।
গ্রামবাসীরা মনে করছেন, বেগুয়াহানার কাছে ৭৫ মিটার চওড়া করে ড্রেজিং করা হলে মুণ্ডেশ্বরীতে ডিভিসি-র ছাড়া জল কম ঢুকবে। বেশি জল ঢুকবে দামোদরে। ফলে, উদয়নারায়ণপুরের বন্যা পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হবে না।
গত বৃহস্পতিবার উদয়নারায়ণপুরে কাজের অগ্রগতি দেখতে এসেছিলেন বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা। তাঁদের ঘিরে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, মুণ্ডেশ্বরী আগাগোড়া ১৫০ মিটার চওড়া করে ড্রেজিং করতে হবে। কিন্তু সেচ দফতর এবং বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের থেকে তাঁরা কোনও আশ্বাস পাননি। তারপরেই এ দিন উদয়নারায়ণপুরের বিভিন্ন এলাকায় দামোদর এবং রামপুর খালের বাঁধ সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দেন গ্রামবাসী।
গ্রামবাসীদের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা। তিনি এ নিয়ে সেচ দফতরকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
কী বলছে সেচ দফতর?
দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, ২০২১ সালে উদয়নারায়ণপুরের সঙ্গে হুগলির খানাকুল-১ এবং ২ ব্লকেও মুণ্ডেশ্বরীর জলে বন্যা হয়। সেই কারণেই বেগুয়াহানার কাছে মুণ্ডেশ্বরীর ৫০০ মিটার ৭৫ মিটার চওড়া করে ড্রেজিং করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বছর যদি দেখা যায়, এর ফলে হাওড়ার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না, তখন এই অংশে ১৫০ মিটারই ড্রেজিং করা হবে। কিন্তু পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা হলে আর ১৫০ মিটার চওড়া করে ড্রেজিং করার প্রয়োজন হবে না।
এ কথা অবশ্য মানতে নারাজ উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy