সাহায্য: পাশে থাকছে এই ছেলেমেয়েরাই। নিজস্ব চিত্র
বাবার শ্বাসকষ্ট। অক্সিজেন জোগাড় করতে না-পেরে মঙ্গলবার রাতে ছেলে ফোন করলেন পরিচিত এক জনকে। ফেসবুকে ‘পোস্ট’ও করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোন্নগরের ওই বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে এলেন জনাকয়েক লোক। তখন মাঝরাত। অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে আসা সেই দলে রয়েছেন রজত বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরপাড়ার সিপিএম প্রার্থী।
হিন্দমোটরের বিধান পার্ক এলাকার এক বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত। শ্বাসকষ্ট রয়েছে। বাড়িতে বৃদ্ধ স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই। বুধবার বিষয়টি জানতে পেরে ওই বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে এলেন কিছু যুবক। তবে তাতে বিশেষ সুরাহা না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। তখনও সহায় ওই যুবকেরা। রাতে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে বৃদ্ধকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে এলেন পার্থ দাস এবং দিলীপ তাঁতি। দু’জনেই ডিওয়াইএফের কর্মী।
সিঙ্গুরের এক মহিলার শ্বাসকষ্টের সমস্যা মেটাতে বুধবার গভীর রাতে বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে এলেন সিপিএমের যুব সংগঠনের কর্মীরাই। শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলির একাধিক বাড়িতেও অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছেন এসএফআই সদস্যরা।
করোনার চোখরাঙানি বাড়ছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে ভরসা জোগাতে এ ভাবেই পথে নেমে পড়েছে ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সিপিএমের মূলত যুব এবং ছাত্র সংগঠনের ছেলেমেয়েরা এই বাহিনী তৈরি করেছেন। হুগলিতেও তৈরি ‘লাল-বাহিনী’।
করোনার প্রথম পর্বে লকডাউনের সময়েও হুগলির নানা জায়গায় সিপিএমের নেতা-কর্মীদের সক্রিয়তা চোখে পড়েছিল। অভুক্ত মানুষদের জন্য শ্রমজীবী ক্যান্টিন খোলা থেকে সস্তায় বাজারের ব্যবস্থা— সবেতেই তাঁরা এগিয়ে এসেছিলেন। চিকিৎসার ব্যাপারেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ বার করোনার রূপ আরও ভয়ঙ্কর। প্রতি দিনই সংক্রমণ বাড়ছে। অসুস্থ কোভিড রোগীর জন্য অক্সিজেন জোগাড় করতে হন্যে হচ্ছেন পরিজনেরা। কখনও প্রয়োজন পড়ছে খাবার বা ওষুধের। খবর পেলে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছেন ‘রেড ভলান্টিয়ার’রা।
কোন্নগরের অরবিন্দ পল্লিতে অসুস্থ বৃদ্ধের ছেলে সুপ্রিয় কুণ্ডু বলেন, ‘‘রাত ১টা নাগাদ ওঁরা আমাদের বাড়িতে এসে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে যান। রজতবাবুও এসেছিলেন। খুব উপকার হয়েছে।’’ সুপ্রিয় জানান, তাঁর বাবাকে এখন কোন্নগরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর করোনা রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’। তবে অন্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে।
সিপিএমের কোতরং এরিয়া কমিটির সদস্য দেবাশিস নন্দীর কথায়, ‘‘আমরা মানুষের কাজ করব বলে ভোট চাই না। আমরা মানুষের কাজ করি বলে ভোটে দাঁড়াই।’’ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়েই উত্তরপাড়া থেকে কোন্নগর, শ্রীরামপুর থেকে জিরাট বা সিঙ্গুর— সর্বত্রই ছাত্র-যুবদের ফোন নম্বর মানুষের প্রয়োজনে সামাজিক মাধ্যমে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পিছিয়ে নেই এসএফআইয়ের মেয়েরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, কোভিডে বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকা মেয়েদের যে কোনও সমস্যায় তাঁরা সাহাযের হাত বাড়িয়ে দিতে তৈরি। এসএফআইয়ের জেলা সভানেত্রী নবনীতা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আপদে-বিপদে মানুষের পাশে থাকাটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। এটা ধারাবাহিকতা। কঠিন পরিস্থিতিতে এই দায়িত্ব আমরা আরও বেশি করে পালন করব।’’
সংগঠন সর্বত্র শক্তপোক্ত নয়। সাধ্যও সীমিত। প্রয়োজন যতটা, তার সবটা করা যে সম্ভব নয়, তাঁরা বিলক্ষণ জানেন। তবু, তার মধ্যেই যথাসম্ভব চেষ্টা করে করোনা-পীড়িত মানুষকে ভরসা জোগাতে চেষ্টার কসুর করছেন না ‘লাল স্বেচ্ছাসেবক’রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy