উজ্জ্বলা প্রকল্পের গ্যাস পাশে পড়ে। কাঠকুটোতেই চলছে রান্না। উলুবেড়িয়ার মধুবাটীতে। ছবি: সুব্রত জানা।
গ্যাসের দামে নাভিশ্বাস উঠছে সকলের। যে সব দরিদ্র মানুষ ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’ প্রকল্পে গ্যাসের সংযোগ নিয়েছিলেন, তাঁদের অবস্থা আরও করুণ। খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ, প্রথম কিস্তি।
জ্বালানির জন্য এখন কাঠ, খড়, শুকনো পাতাই ভরসা মিতা কিস্কুর। উজ্জ্বলা যোজনা প্রকল্পের গ্যাস আছে। কিন্তু সিলিন্ডার-ওভেনের ব্যবহার প্রায় নেই। গ্যাসের যা দাম!
গোঘাটের কামারপুকুর আদিবাসীপাড়ার ওই মহিলা গত কয়েক মাসে রান্নাঘরের বাইরে একটি চালা বানিয়ে ফেলেছেন। সেখানে ডালপালা, কাঠকুটো জড়ো করে রাখেন। তাঁর খেদ, ‘‘গ্যাসের দাম যা বেড়েছে, তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে কেনাই সম্ভব হচ্ছে না। আগে ভর্তুকি মিলত। এখন তা-ও মেলে না। গ্যাস শেষ হওয়ার পর টানা কুড়ি দিন কাঠের জ্বালানিতে রান্নাবান্না হয়েছে। দিনসাতেক হল স্বামী ৯২০ টাকায় গ্যাসভরা সিলিন্ডার এনেছে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করি না।’’
গ্যাসের দামে নাভিশ্বাস উঠছে গৃহস্থের। প্রান্তিক এবং দরিদ্র মানুষদের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার বিনামূল্যে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া শুরু করে ২০১৬ সালে পয়লা মে থেকে। মহিলা উপভোক্তাদের জন্য ওই প্রকল্প। যাতে ধোঁয়া, দূষণ এড়িয়ে তাঁরা সহজে রান্না করতে পারেন। মিতা কিস্কুর মতো অনেকেই ভেবেছিলেন, এতে তাঁরা উপকৃত হবেন। কিন্তু কোথায় কী!
মিতার মতোই রান্নার কাজে গ্যাস বাঁচানোর গল্প রয়েছে ওই পাড়ারই শম্ভু কিস্কু, নয়ন কিস্কু, হাজরাপাড়ার জয়দেব হাজরা, নন্দনা হাজরাদেরও। সকলেই উজ্জ্বলা যোজনার উপভোক্তা। আরামবাগের তিরোলের জগাই মণ্ডল বলেন, “বছর চারেক হয়ে গেল উজ্জ্বলা গ্যাস সংযোগ পেয়েছি। সেই সময়ে বিনা পয়সায় সিলিন্ডার আর ওভেনটুকুতে খালি সাশ্রয় হয়েছিল। তারপর তো আমাদের মতো গরিব পরিবারে বিশেষ সুবিধা মিলছে না।”
পান্ডুয়া ব্লকের সিমলাগড় ভিটাসিন পঞ্চায়েতের অধীনে পোটবা, পাটরা গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা উজ্জ্বলা গ্যাস সংযোগ নিয়েছিলেন। পাঁচগ্রাম পূর্বপাড়ার বাসিন্দা পূর্ণিমা ক্ষেত্রপাল বলেন, ‘‘বছরখানেক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পে গ্যাসের সংযোগ পাই। প্রথমে বলা হয় কোনও পয়সা লাগবে না। কিন্তু গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার সময় ৪৮০ টাকা নিয়েছিল। সংযোগের পরের মাস থেকেই গ্যাসের পুরো দাম নিচ্ছেন ডিলার। সে সময় আমাদের জানানো হয়েছিল, গ্যাসের ভর্তুকির টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে আসবে। এখনও কোনও টাকা পাইনি।’’
বৈদ্যবাটী রেল স্টেশনের পশ্চিমপাড়ে একটি ঝুপড়িতে বাস করেন ক্ষমা দাস। স্বামী ও তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার। স্বামী রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে কাজ করেন। ক্ষমা নিজে কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তবু নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তার উপরে গ্যাসের দামবৃদ্ধি তাঁর ঘুম কেড়েছে।
আগে প্রতিদিন সংসারের কাজ সেরে রান্নার জ্বালানির খোঁজে ক্ষমাকে বেরোতে হত স্থানীয় মাঠঘাটে। ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা গ্যাস পেয়ে তাঁর সংসার চালাতে সুবিধা হবে। কিন্তু এখন হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৯-এর এপ্রিলে সংযোগ পাই। ওভেন কিনতে খরচ লাগে ৬০০ টাকা। এখন গ্যাসের যা দাম কম ব্যবহার করি। কোনও ভর্তুকির টাকা আসে না।’’
এ সমস্যা শুধু হুগলির প্রান্তিক মানুষদের নয়, একই ছবি হাওড়াতেও। উলুবেড়িয়ার রাউত গ্রামের দরিদ্র মহিলারা এখন জ্বালানির জন্য জঙ্গল থেকে হোগলা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। মালঞ্চবেড়িয়া গ্রামের মিনা হাজরা বলেন, ‘‘সারা জীবন কাঠের উনুনে রান্না করে খেতে হয়েছে। গ্যাস পেয়ে ভেবেছিলাম, এ বার শান্তি। এখন দেখছি, গ্যাসের দাম প্রায় হাজার টাকা। পরিচারিকার কাজ করে খাই। তিন হাজার টাকা মাইনে পাই। সংসারে আমরা পাঁচ জন। হাজার টাকা গ্যাস কিনতেই চলে গেলে সংসার চলবে কিসে? তাই আশেপাশের বাগান থেকে জ্বালানি জোগাড় করা শুরু করেছি।’’ একই বক্তব্য মধুবাটী গ্রামের পুণ্য মণ্ডলেরও। কাঠকুটো জোগাড় করে ধোঁয়ার মধ্যে তাঁকে রান্না করতে হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy