১১ ফেব্রয়ারি শিক্ষা দফতরের পিএম পোষণ বিভাগ থেকে নির্দেশে জানানো হয়েছে, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ১১ দিন গোটা ডিম বা ফলের জন্য উপভোক্তা পিছু ৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মিডডে মিলে যা বরাদ্দ, তাতে পড়ুয়াদের সপ্তাহের এক দিন গোটা ডিম দিতেই হিমসিম অবস্থা! অনেক স্কুলই অর্ধেক ডিম বা ডিম ভেজে তা কেটে ঝোল করে সামাল দিচ্ছে। তা নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের ক্ষোভও বিস্তর। এই অবস্থায় অতিরিক্ত পুষ্টি হিসাবে মাত্র ১১ দিন গোটা ডিম দিয়ে কী লাভ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হুগলি ও হাওড়া জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।
আরামবাগের তেলুয়া শিক্ষাসদনের প্রধান শিক্ষক কুন্তল ঘোষাল, পুরশুড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌম্যজিৎ মাইতির কথায় বক্তব্য, ‘‘উদ্যোগ ভাল। কিন্তু এটা তো ধারাবাহিক ব্যবস্থা নয়। এর চেয়ে যতটা সম্ভব উপভোক্তা-পিছু বরাদ্দ বাড়ালে ভাল হত।’’ সিঙ্গুরের বলরামবাটির মিল্কি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর চক্রবর্তীর খেদ, ‘‘মাত্র ১১ দিনই পুষ্টি দরকার? সারা বছর আর দরকার নেই? তা ছাড়া, সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল কেন, তা-ও মাথায় আসছে না। ওই সময়ে শিশু যদি মায়ের সঙ্গে কোথাও যায়, সে তো বঞ্চিত হল!’’
তেলুয়া গ্রামের অভিভাবক চন্দন মালিক, জাঙ্গিপাড়া রাজবলহাটের শান্তি মণ্ডল, সূর্যদেব ঘোষ প্রমুখের ক্ষোভ, ‘‘মাত্র ১১ দিনের এই বাড়তি পুষ্টি কেন? সারা বছরের জন্য নয় কেন?’’
মিডডে মিলে চাল সরকারি ভাবে সরবরাহ হওয়া ছাড়া উপভোক্তা পিছু বরাদ্দের টাকার মধ্যেই কিনতে হয় আনাজ, ডাল, সয়াবিন, পোস্ত, ডিম, তেল-সহ রান্নার মুদিখানার সামগ্রী, গ্যাস সিলিন্ডার। তার উপরে উপভোক্তার ১৫ শতাংশ খাবে না ধরে ৮৫ শতাংশ পড়ুয়ার জন্য পয়সা দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামের স্কুলগুলোতে অধিকাংশ দিন এই পড়ুয়াদের ৯০ শতাংশ বা তার বেশি খায় বলে বিভিন্ন স্কুল জানিয়েছে।
কয়েক দিন আগে পর্যন্ত একটা ডিমের দাম ছিল সাড়ে ৭ টাকা। সেটা এখন কমে ৬ টাকা হলেও আনাজ-সহ অন্যান্য বাজার দর আগুন।এর আগে গত ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের গোড়ায় মিডডে মিলে উপভোক্তা-পিছু সপ্তাহে ২০ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করা হয়েছিল। নির্দেশ ছিল ওই টাকায় দিতে হবে ডিম, মুরগির মাংস এবং মরসুমি ফল। হুগলিতে ওই বছর ৯ জানুয়ারি থেকে প্রকল্পটি এপ্রিল পর্যন্ত চলে।
প্রধানমন্ত্রী পোষণ প্রকল্পের অধীন ‘ফ্লেক্সি ফান্ড’ থেকে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “মিডডে মিল খাতে সারা বছরে বরাদ্দ খাতের একটি অংশ ফ্লেক্সি তথা নমনীয়। নির্দিষ্ট রুটিন মিডডে মিল ছাড়াও স্কুলগুলি পড়ুয়াদের চাহিদা পূরণের জন্য ব্যবহার করতে পারে। কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ এবং রাজ্যের ৪০ শতাংশ বরাদ্দের উদ্বৃত্ত টাকা থেকেই এই ব্যবস্থা।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)