চলছে জল পরীক্ষা। নিজস্ব চিত্র
অবিরাম পড়ছে ট্যাপকলের জল। রাস্তাঘাটে তো বটেই, বাড়িতেও এমন ভাবে জল অপচয় পরিচিত দৃশ্য। এই অসচেতনতা বিশেষজ্ঞদের চিন্তা বাড়াচ্ছে। তাঁরা বলছেন, ভুগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ার ক্রমেই কমছে। জলের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। জল অপচয় বন্ধ এবং তার সংরক্ষণের আর্জিতে মঙ্গলবার ‘বিশ্ব জলদিবস’-এ সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করল বিভিন্ন সংস্থা। পথে নামল স্কুল-পড়ুয়ারা।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যুক্তিমনের উদ্যোগে কোন্নগর, নবগ্রাম, কানাইপুরের প্রায় ১৫টি বিদ্যালয় সচেতনতা কর্মসূচিতে যোগ দেয়। পথচলতি মানুষকে বোঝায় ছাত্রছাত্রীরা। লিফলেট বিলি করে। পরিবেশ ও বিজ্ঞানকর্মীদের অভিযোগ, ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার ক্রমেই শেষের পথে হলেও বিপুল পরিমাণ জল অপচয় অব্যাহত। এ ব্যাপারে প্রশাসন থেকে পুরসভা, পঞ্চায়েত— কোনও তরফেই মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস বিশেষ চোখে পড়ে না। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আর্সেনিক-সহ বিভিন্ন ধাতুযুক্ত জলের পরিমাণ বাড়ছে। মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হুগলি জেলার একাধিক ব্লকে রয়েছে আর্সেনিকের সমস্যা। মাটি ও পরিবেশ দূষণের ফলে ভুগর্ভস্থ জলের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়িক স্বার্থে বোতলজাত পানীয় জলের চাহিদা বাড়ানো হচ্ছে কৃত্রিম পথে। পরিশুদ্ধ পানীয় জল কিনতে হচ্ছে চড়া দামে।
যুক্তিমন ও ‘সেভিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেন্ড অব এনভায়রনমেন্ট’-এর উদ্যোগে এবং ‘বহমান’ নামে একটি সংস্থার ব্যবস্থাপনায় উত্তরপাড়ার মাখলায় ইটভাটা লাগোয়া নলকূপ, খালের জলের গুণগত মান (টিডিএস, পিএইচ, নাইট্রেট, নাইট্রোজেন, ক্লোরাইড, আয়রন, সালফেট ইত্যাদি) মেপে দেখান পরিবেশবিদ সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। দেখা যায়, একাধিক জায়গায় পানীয় জল গুণগত মান ঠিক নেই। বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন রাসায়নিকের উপস্থিতি। জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে জলের গুণমান যাতে যথাযথ থাকে, সে ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত বলে পরিবেশ এবং বিজ্ঞানকর্মীরা মনে করেন। ‘সেভিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেন্ড অব এনভায়রনমেন্ট’ নামে সংস্থাটি জলের গুণগত মান পরীক্ষার কাজ করে। সুদীপ্তবাবু সংস্থার সম্পাদক ও প্রকল্প অধিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এখানে মানুষ যে জল পাচ্ছেন, তা কতটা ভাল বা খারাপ, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। কত স্বল্প বা বিনা খরচে কী করে ওঁরা ভাল করে জল খেতে পারেন, তা হাতেকলমে দেখানো হয়েছে।’’
যুক্তিমনের তরফে চিকিৎসক সুমিত মিত্র বলেন, ‘‘মাটির তলায় বিভিন্ন ভাবে রাসায়নিকের অন্তর্ভুক্তি পানীয় জলকে বিষময় করে তুলছে। দূষণ কমানো, রিচার্জ করে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বাড়ানোর পরিকল্পনা দরকার।’’ সংস্থার কর্মকর্তাদের আর্জি, পানীয় জলকে আইনগত ভাবে সংরক্ষণ করা হোক। সাধারণত, বিশেষত শহুরে এলাকায় শৌচাগার, কাচাকাচি-সহ অন্য কাজে পানীয় জলই ব্যবহার করা হয়। এই সব কাজে অপরিশোধিত জল ব্যাবহার, প্রয়োজনে নদী, পুকুরের জল ব্যবহারযোগ্য করা, কৃষিক্ষেত্রে জলের অপচয় রোধে বিকল্প
ব্যবস্থা, শিল্পক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার না করার পরিকল্পনার আর্জিও জানাচ্ছেন তাঁরা।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ব্যান্ডেল মগরা বিজ্ঞান কেন্দ্রের উদ্যোগে এ দিন সাহাগঞ্জের শ্যামাপ্রসাদ স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সাইকেল মিছিল করে। চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের সুকান্তনগর অনুকূলচন্দ্র শিক্ষাশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনাচক্র হয়। ভূগর্ভস্থ জলের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেন বিজ্ঞান মঞ্চের তরুণ মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy