Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

‘নিয়োগ বাতিল হওয়ায় গ্রামে অনেকে বাঁকা চোখে দেখছেন’

আদালতের নির্দেশ, বাতিল হওয়া পদে তিন মাসের মধ্যে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট-সহ ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন করে নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

কলকাতা হাই কোর্ট।

কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৮:১৫
Share: Save:

প্রশিক্ষণহীন (নিয়োগের সময় ডিইএলএড ডিগ্রি ছিল না) ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। তালিকায় হুগলির ২০৮৯ জন আছেন বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর। রুজিরুটি হারানোর আশঙ্কায় তাঁদের অনেকেই মুষড়ে পড়েছেন। কেউ সামাজিক সম্মান নষ্টের কথা বলছেন। অনেকে আবার তাকিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পদক্ষেপের দিকে।

আদালতের নির্দেশ, বাতিল হওয়া পদে তিন মাসের মধ্যে অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট-সহ ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন করে নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় ওই শিক্ষকেরাও অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পাশ না করলে অবশ্য চাকরি হারাতে হবে। এ নিয়েই দুশ্চিন্তায় ওই শিক্ষকেরা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, কেউ কেউ হয়তো ঘুরপথে চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু, তার মাসুল সবাইকে কেন দিতে হবে? চাকরি পাওয়ার দু’বছরের মধ্যে সরকারি নির্দেশে তাঁরা ডিইএলএড কোর্স করেছেন। এখন কেন চাকরি হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হবে? পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জেলার বিভিন্ন চক্র (সার্কেল) ধরেওই শিক্ষকেরা কাল, সোমবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে।

তাঁর নিয়োগ বাতিল বলে জেনেছেন ব্যান্ডেলের নেতাজিনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ধীরাজ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে চাকরি পেয়েছি। পরে ডিইএলএড করেছি। তা-ও বাতিল! বাড়ি দোতলা করার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছি। চাকরি গেলে আত্মহত্যা করতে হবে।’’

ধীরাজের মতোই উত্তর চন্দননগর জিএসএফপি বিদ্যালয়ের শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত সরকার জানান, চাকরি পেয়ে ঋণ নিয়ে জমি কিনেছেন। মাস-মাইনের বড় অংশ ঋণ শোধ করতে চলে যায়। তাঁর চিন্তা, ‘‘আগামী চার মাস পার্শ্বশিক্ষকের স্কেলে বেতন পাব। তার পরে চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। ঋণ শুধব কী ভাবে! চাকরি হারালে মৃত্যু ছাড়া গতি থাকবে না।’’ পান্ডুয়ার এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘সর্বনাশা রায়। এর থেকে ফাঁসি দিলে ভাল হত।’’ সপ্তগ্রামের এক শিক্ষকের প্রশ্ন, কিছু মানুষের জন্য নির্দোষ এত মানুষকে ভুগতে হবে কেন? আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগের আর্জিও জানাচ্ছেন কেউ কেউ।

গোঘাটের কুমুড়শার এক শিক্ষক জানান, পর্ষদ উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলেছে। পর্ষদের উপরেই তাঁরা নির্ভর করছেন। নিজেদের মামলা লড়ার মতো কোনও কাগজপত্র তাঁদের নেই। ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘আদালত বলেছে, চার মাস স্কুল যেতে পারব। যাব কোন মুখে? নিজের গ্রামেই লোকই বাঁকা চোখে দেখছেন।’’ আরামবাগের তিরোলের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘সামাজিক মানসম্মান সব শেষ। ভুল তো আমাদের ছিল না। পর্ষদের ভুল। তারা প্রশিক্ষণহীনদের নিয়েছিল কেন? তবে, পরে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তাই আশা হারাইনি।’’ আরামবাগ শহরের বাসিন্দা এক শিক্ষক জানান, ২০২১ সালে চাকরি পেয়েছেন। প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়নি। তাই চিন্তায় রয়েছেন। তিনিও পর্ষদের ভরসায়।

প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের জেলা পরিদর্শক দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘‘পর্ষদ থেকে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। বাতিলের তালিকায় যাঁরা আছেন, নিয়োগের পরে তাঁদের প্রায় সকলেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।’’

কিছু ক্ষেত্রে ওই শিক্ষকদের ভরসা জোগাচ্ছেন সহকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া অপরাধ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের দোষ নেই। পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়ে থাকলে তা পর্ষদের ভুল। তার জন্য তাঁদের নিয়োগ বাতিল হবে কেন? এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘চাকরি পেয়ে কেউ ঋণ নিয়ে বাড়ি করছেন। কেউ বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। এখন কী করবেন ওঁরা? সহকর্মী হিসাবে পাশে থাকছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court TET Recruitment Chinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy