পাঁচ মাস আগের বন্যায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর বাঁধ ভেঙেছিল খানাকুল ২ ব্লকের বলাইচকে এবং হাওড়ার উদনারায়ণপুর ব্লকের কয়েকটি জায়গায়। তা এখনও মেরামত হয়নি। সেই ভাঙন দিয়ে বোরো চাষের জন্য ডিভিসি-র ছাড়া জল ঢুকে দুই জেলার বিস্তীর্ণ আলুর খেত ভাসাল। ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করে দুই জেলাতেই চাষিরা সেচ দফতরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।
শনিবার রাত থেকেই জল ঢুকতে থাকে। খানাকুল ২ ব্লকের চিংড়া পঞ্চায়েত এলাকার বলাইচকে ভাঙনটির বিস্তার প্রায় ২০০ ফুট। রবিবার সকালে জেলা প্রশাসনের লোকজন পরিস্থিতি দেখে যান। বিকেলে পরিদর্শনে আসেন রাজ্য সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস সেনগুপ্ত। পরে তিনি নতিবপুর ১ পঞ্চায়েত অফিসে ব্লক এবং জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। বৈঠকে আপাতত নদীর জলের চাপ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
নদীর জল নামলেই সেচ দফতর ভাঙা বাঁধ স্থায়ী ভাবে সংস্কার করে জানিয়ে বিডিও মধুমিতা ঘোষ বলেন, “আপাতত নদীতে জলের চাপ কমাতে মাড়োখানা পঞ্চায়েতের গাবতলার স্লুস গেট খুলে দেওযা হচ্ছে। কিছু জল রূপনারায়ণ নদে ফেলা হবে এবং ওই পঞ্চায়েত এলাকারই আমতলায় নদীর জল ধরে রাখার জন্য তৈরি বোরো বাঁধ কাটা হবে।” বাঁধটি চিংড়া মৌজা থেকে হাওড়া সেচ বিভাগের অধীন। ওই বিভাগের এক বাস্তুকার বলেন, ‘‘বাঁধ মেরামতির প্রকল্প রচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো আছে। অনুমোদন হলেই দরপত্র প্রক্রিয়া সেরে কাজ হবে।”
রবিবার বিকেল পর্যন্ত ভাঙন দিয়ে জল ঢোকা আটাকানোর ব্যবস্থা না-হওয়ায় চাষিদের ক্ষোভ বেড়েছে। বলাইচক এবং পাশের নবীনচক গ্রামের বেশ কিছু আলুর খেত প্লাবিত হয়েছে। কৃষি দফতরের হিসাবে, এ দিন বিকেল পর্যন্ত বলাইচক এবং নবীনচকে প্রায় ৫৫০ বিঘা আলুর জমি জলমগ্ন হয়েছে। দুপুরে যা ছিল প্রায় ৩০০ বিঘা।
সকালে বিডিও-র আশ্বাস মতো দুপুরে কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে এসে চাষিদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ১০ টাকা দামে আলু কেনা শুরু করেন। বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৬০০ বস্তা (৫০ কেজিতে এক বস্তা) আলু কেনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে জানা গিয়েছে। কিন্তু সার্বিক ক্ষতি পূরণ হবে কী করে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন চাষিরা।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রাজকুমার সামন্ত ও মণ্টু পোড়েল জানান, এক কোমর জল থেকে সারাদিনে ৫-১০ কাঠার আলু উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। বাকি আলু সবই একদিন ডুবে থাকলেই পচে যাবে। তাঁদের খেদ, ‘‘সেই ক্ষতিপূরণ হবে কী করে? সকলের তো বিমা নেই।’’
একই ভাবে উদয়নারায়ণপুরে সুবলচক, বলাইচক, মানশ্রী, আমবাগান-সহ কিছু গ্রামের আলুখেত ডুবেছে। অষ্টপদ আদক ও অশোক কোলে নামে দুই আলুচাষির ক্ষোভ, ‘‘বাঁধগুলি যদি তাড়াতাড়ি মেরামত করা হত, তা হলে এ রকম ক্ষতি হত না। মহাজনের ঋণ কী ভাবে ঋণ
শোধ করব?’’
সেচ দফতরের কাজের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজাও। তিনি বলেন, ‘‘সেচ দফতরের উদাসীনতার জন্যই গরিব চাষিদের ক্ষতি হল। প্রায় ৫০০ বিঘা জমির আলু জলের তলায়।’’
হাওড়া জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বাঁধ মেরামতের কাজ চলছিল। অনেক জায়গায় তা হয়েও গিয়েছে। কী ভাবে জল ঢুকে গেল, বোঝা যাচ্ছে না। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)