E-Paper

জাতীয় সড়কের পাশে শিল্প-বর্জ্যের স্তূপে আগুন, এলাকা বিষ-ধোঁয়ার গ্রাসে

শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। মনে হবে, ওই ধোঁয়া আর তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ নাসারন্ধ্র দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে আঘাত করছে।

ধোঁয়াচ্ছন্ন: জাতীয় সড়কের পাশে ফেলে যাওয়া শিল্প-বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় দূষণে ভরে যাচ্ছে এলাকা। হাওড়ার রানিহাটির কাছে।

ধোঁয়াচ্ছন্ন: জাতীয় সড়কের পাশে ফেলে যাওয়া শিল্প-বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় দূষণে ভরে যাচ্ছে এলাকা। হাওড়ার রানিহাটির কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:০০
Share
Save

দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কোথাও আগুন লেগেছে। প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে নাকে এসে ঝাপটা মারবে তীব্র দুর্গন্ধ। আরও কিছুটা এগোলে মনে হবে, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। মনে হবে, ওই ধোঁয়া আর তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ নাসারন্ধ্র দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে আঘাত করছে।

হাওড়ার ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কোলাঘাটের দিকে এগোলে ধূলাগড় টোল প্লাজ়া পেরোনোর পরে যানবাহনে থাকা যাত্রী থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের সঙ্গী এই অনুভূতি। এর কারণ ধূলাগড় থেকে উলুবেড়িয়া পর্যন্ত জাতীয় সড়কের দু’পাশে ফেলে রাখা শিল্প-বর্জ্যে জ্বলতে থাকা আগুন। তারই বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে মিশে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে অন্তত ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। যার জেরে পথচলতি মানুষ, যানবাহনের যাত্রী ও এলাকার বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বলে অভিযোগ। কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। পরিবেশবিদেরা বলছেন, ওই শিল্প-বর্জ্য এমনিতেই মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর। তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় ওই বর্জ্য থেকে বেরোনো ধোঁয়া বাতাসে মিশে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনছে।

কী সমস্যা হতে পারে এই বায়ুদূষণের জন্য?

ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ডিরেক্টর স্ববৃন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বিষাক্ত শিল্প-বর্জ্য ও তাতে আগুন লাগানোর জেরে তৈরি ধোঁয়া— দুই থেকেই ফুসফুসের সংক্রমণ, হাঁপানি, নানা ধরনের চমর্রোগ, এমনকি, ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এই শিল্পজাত বর্জ্য নির্দিষ্ট এলাকায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নষ্ট করে ফেলতে হয়।’’

কিন্তু কারা ফেলছেন এই বর্জ্য?

অভিযোগ, হাওড়ার অজস্র শিল্প কারখানা তাদের বর্জ্যের সিংহভাগই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাতের অন্ধকারে ডাম্পারে করে নিয়ে এসে ফেলে যাচ্ছে জাতীয় সড়কের দু’পাশে। বাকিটা ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন পুরসভার ভ্যাটে। এই বিষাক্ত বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে গ্লাস উল, এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টের বর্জ্য, কটন ওয়েস্ট, বিভিন্ন মেয়াদ-উত্তীর্ণ ওষুধপত্র, থার্মোকল, বিভিন্ন নরম পানীয়ের প্লাস্টিকের বোতল-সহ নানা জিনিস। অথচ, দূষণ পর্ষদ থেকে জানা গিয়েছে, প্রতিটি শিল্প কারখানাকে ব্যবসা করার আগে লিখিত ভাবে জানাতে হয়, প্রতিদিন কতটা বর্জ্য কারখানা থেকে বেরোবে এবং কতটা হলদিয়ায় অবস্থিত রাজ্য দূষণ পর্ষদের নিয়ন্ত্রণাধীন, স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বর্জ্য শোধন ও নিষ্কাশন প্রকল্পে পাঠাতে হবে। যদিও ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বর্জ্য পাঠানোর জন্য ১২৭৩টি সংস্থা তালিকাভুক্ত থাকলেও মাত্র ২০-২২টি সংস্থা নিয়মিত বর্জ্য পাঠায়। বাকিরা এই ভাবে হাইওয়ের পাশে কিংবা পুরসভার ভাগাড়ে গিয়ে ফেলে আসে।’’

বেআইনি ভাবে শিল্প-বর্জ্য ফেলে যাওয়ার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে সেই বিষাক্ত ধোঁয়া। স্থানীয় সূত্রের খবর, কাগজকুড়ানিরাই সাধারণত আগুন লাগিয়ে দেন। দাহ্য জিনিসপত্র
পুড়ে গেলে সেখান থেকে তাঁরা বিক্রি করার মতো জিনিস সংগ্রহ করেন। রানিহাটির বাসিন্দা সম্রাট চন্দ বলেন, ‘‘দিনের পর দিন রাতের অন্ধকারে হাইওয়ের পাশে এই দূষিত শিল্প-বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’

১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে যে এই ভাবে মানুষের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর শিল্প-বর্জ্য বিনা বাধায় ফেলা হচ্ছে, তা জানেনই না রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পষর্দের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। তিনি বলেন, ‘‘কোনও শিল্প সংস্থা ক্ষতিকারক বর্জ্য এই ভাবে ফেলতে পারে না। কিন্তু হাওড়ায় জাতীয় সড়কের ধারে তা ফেলা হচ্ছে, এই ধরনের অভিযোগ কেউ আমাদের কাছে করেননি। আমি এ সব কিছু জানি না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ একই বক্তব্য হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার। তবে তিনি বলেন, ‘‘এই অভিযোগ আমরা পাইনি। তবু খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pollution NH industry Waste Diseses Dhulagarh Uluberia

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।